তোমায় সৃষ্টি করব আমি এই ছিল মোর পণ। দিনে দিনে করেছিলেম তারি আয়োজন। তাই সাজালেম আমার ধুলো, আমার ক্ষুধাতৃষ্ণাগুলো, আমার যত রঙিন আবেশ, আমার দুঃস্বপন। "তুমি আমায় সৃষ্টি করো' আজ তোমারে ডাকি-- "ভাঙো আমার আপন মনের মায়া-ছায়ার ফাঁকি। তোমার সত্য, তোমার শান্তি, তোমার শুভ্র অরূপ কান্তি, তোমার শক্তি, তোমার বহ্নি ভরুক এ জীবন।'
কথা কও, কথা কও। অনাদি অতীত, অনন্ত রাতে কেন বসে চেয়ে রও? কথা কও, কথা কও। যুগযুগান্ত ঢালে তার কথা তোমার সাগরতলে, কত জীবনের কত ধারা এসে মিশায় তোমার জলে। সেথা এসে তার স্রোত নাহি আর, কলকল ভাষ নীরব তাহার-- তরঙ্গহীন ভীষণ মৌন, তুমি তারে কোথা লও! হে অতীত, তুমি হৃদয়ে আমার কথা কও, কথা কও। কথা কও, কথা কও। স্তব্ধ অতীত, হে গোপনচারী, অচেতন তুমি নও-- কথা কেন নাহি কও! তব সঞ্চার শুনেছি আমার মর্মের মাঝখানে, কত দিবসের কত সঞ্চয় রেখে যাও মোর প্রাণে! হে অতীত, তুমি ভুবনে ভুবনে কাজ করে যাও গোপনে গোপনে, মুখর দিনের চপলতা-মাঝে স্থির হয়ে তুমি রও। হে অতীত, তুমি গোপনে হৃদয়ে কথা কও, কথা কও। কথা কও, কথা কও। কোনো কথা কভু হারাও নি তুমি, সব তুমি তুলে লও-- কথা কও, কথা কও। তুমি জীবনের পাতায় পাতায় অদৃশ্য লিপি দিয়া পিতামহদের কাহিনী লিখিছ মজ্জায় মিশাইয়া। যাহাদের কথা ভুলেছে সবাই তুমি তাহাদের কিছু ভোল নাই, বিস্মৃত যত নীরব কাহিনী স্তম্ভিত হয়ে বও। ভাষা দাও তারে হে মুনি অতীত, কথা কও, কথা কও।
বহিয়া হালকা বোঝা চলে যায় দিন তার অবকাশ দেয় না সে কোনো দুশ্চিন্তার! সম্বল কম বটে, আছে বটে ঋণ দায়-- অনুরাগ নেই তবু ভাগ্যের নিন্দায়। পাড়া-প্রতিবেশীদের কটুতম ভাষ্যে নীরব জবাব তার স্মিত ঔদাস্যে জন্ম নেবার কালে পেয়েছিল যৌতুক ভাঙাচোরা জীবনের বিদ্রূপে-- কৌতুক।