© Kriya Unlimited, 2010 - 2024
রথযাত্রার দিন কাছে।তাই রানী রাজাকে বললে, 'চলো, রথ দেখতে যাই।'রাজা বললে, 'আচ্ছা।'ঘোড়াশাল থেকে ঘোড়া বেরোল, হাতিশাল থেকে হাতি। ময়ূরপংখি যায় সারে সারে, আর বল্লম হাতে সারে সারে সিপাইসান্ত্রি। দাসদাসী দলে দলে পিছে পিছে চলল।কেবল বাকি রইল একজন। রাজবাড়ির ঝাঁটার কাঠি কুড়িয়ে আনা তার কাজ।সর্দার এসে দয়া করে তাকে বললে, 'ওরে, তুই যাবি তো আয়।'সে হাত জোড় করে বললে, 'আমার যাওয়া ঘটবে না।'রাজার কানে কথা উঠল, সবাই সঙ্গে যায়, কেবল সেই দুঃখীটা যায় না।রাজা দয়া করে মন্ত্রীকে বললে, 'ওকেও ডেকে নিয়ো।'রাস্তার ধারে তার বাড়ি। হাতি যখন সেইখানে পৌঁছল মন্ত্রী তাকে ডেকে বললে, 'ওরে দুঃখী, ঠাকুর দেখবি চল্।'সে হাত জোড় করে বলল, 'কত চলব। ঠাকুরের দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছই এমন সাধ্য কি আমার আছে।'মন্ত্রী বললে, 'ভয় কী রে তোর, রাজার সঙ্গে চল...
তখন অরাজকতার চরগুলো কণ্টকিত করে রেখেছিল রাষ্ট্রশাসন, অপ্রত্যাশিত অত্যাচারের অভিঘাতে দোলায়িত হত দিন রাত্রি। দুঃস্বপ্নের জাল জড়িয়েছিল জীবনযাত্রার সমস্ত ক্রিয়াকর্মে, গৃহস্থ কেবলই দেবতার মুখ তাকিয়ে থাকত, অপদেবতার কাল্পনিক আশঙ্কায় মানুষের মন থাকত আতঙ্কিত। মানুষ হোক আর দেবতাই হোক কাউকে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল, কেবলই চোখের জলের দোহাই পাড়তে হত। শুভ কর্ম এবং অশুভ কর্মের পরিণামের সীমারেখা ছিল ক্ষীণ। চলতে চলতে পদে পদে মানুষ হোঁচট খেয়ে খেয়ে পড়ত দুর্গতির মধ্যে।এমন অবস্থায় বাড়িতে রূপসী কন্যার অভ্যাগম ছিল যেন ভাগ্যবিধাতার অভিসম্পাত। এমন মেয়ে ঘরে এলে পরিজনরা সবাই বলত 'পোড়ারমুখী বিদায় হলেই বাঁচি'। সেই রকমেরই একটা আপদ এসে জুটেছিল তিন-মহলার তালুকদার বংশীবদনের ঘরে।কমলা ছিল সুন্দরী, তার বাপ মা গিয়েছিল মারা, সেই সঙ্গে ...
সুচিত্রা মিত্র
সাগর সেন
'মাসি !''ঘুমোও,যতীন,রাত হল যে ।''হোক-না রাত,আমার দিন তো বেশি নেই । আমি বলছিলুম,মণিকে তার বাপের বাড়ি-- ভূলে যাচ্ছি,ওর বাপ এখন কোথায়--''সীতারামপুরে ।''হাঁ সীতারামপুরে । সেইখানে মণিকে পাঠিয়ে দাও,আরো কতদিন ও রোগীর সেবা করবে । ওর শরীর তো তেমন শক্ত নয় ।''শোনো একবার ! এই অবস্থায় তোমাকে ফেলে বউ বাপের বাড়ি যেতে চাইবেই বা কেন ।''ডাক্তারেরা কী বলেছে সে কথা কি সে--''তা সে নাই জানল-- চোখে তো দেখতে পাচ্ছে । সেদিন বাপের বাড়ি যাবার কথা যেমন একটু ইশারায় বলা অমনি বউ কেঁদে অস্থির ।'মাসির এই কথাটার মধ্যে সত্যের কিছু অপলাপ ছিল, সে কথা বলা আবশ্যক । মণির সঙ্গে সেদিন তাঁর এই প্রসঙ্গে যে আলাপ হইয়াছিল সেটা নিম্নলিখিত-মতো ।'বউ,তোমার বাপের বাড়ি থেকে কিছু খবর এসেছে বুঝি ? তোমার জাঠতুতো ভাই অনাথকে দেখলুম যেন । 'হাঁ, মা ব'লে ...
জয়তী চক্রবর্তী
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়
গানমাটির প্রদীপখানি আছে মাটির ঘরের কোলে,সন্ধ্যাতারা তাকায় তারই আলো দেখবে ব'লে।সেই আলোটি নিমেষহতপ্রিয়ার ব্যাকুল চাওয়ার মতো,সেই আলোটি মায়ের প্রাণের ভয়ের মতো দোলে।সেই আলোটি নেবে জ্বলে শ্যামল ধরার হৃদয়তলে,সেই আলোটি চপল হাওয়ায় ব্যথায় কাঁপে পলে পলে।নামল সন্ধ্যাতারার বাণীআকাশ হতে আশিস আনি,
মিলনের প্রথম দিনে বাঁশি কী বলেছিল।সে বলেছিল, 'সেই মানুষ আমার কাছে এল যে মানুষ আমার দূরের।'আর, বাঁশি বলেছিল, 'ধরলেও যাকে ধরা যায় না তাকে ধরেছি, পেলেও সকল পাওয়াকে যে ছাড়িয়ে যায় তাকে পাওয়া গেল।'তার পরে রোজ বাঁশি বাজে না কেন।কেননা, আধখানা কথা ভুলেছি। শুধু মনে রইল, সে কাছে; কিন্তু সে যে দূরেও তা খেয়াল রইল না। প্রেমের সে আধখানায় মিলন সেইটেই দেখি, যে আধখানায় বিরহ সে চোখে পড়ে না, তাই দূরের চিরতৃপ্তিহীন দেখাটা আর দেখা যায় না; কাছের পর্দা আড়াল করেছে।দুই মানুষের মাঝে যে অসীম আকাশ সেখানে সব চুপ, সেখানে কথা চলে না। সেই মস্ত চুপকে বাঁশির সুর দিয়ে ভরিয়ে দিতে হয়। অনন্ত আকাশের ফাঁক না পেলে বাঁশি বাজে না।সেই আমাদের মাঝের আকাশটি আঁধিতে ঢেকেছে, প্রতি দিনের কাজে কর্মে কথায় ভরে গিয়েছে, প্রতি দিনের ভয়ভাবনা-কৃপণতায়...
সাহানা বাজপেয়ী
অর্ঘ্য সেন
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
মনোময় ভট্টাচার্য্য
কে ডাকে! আমি কভু ফিরে নাহি চাই।কত ফুল ফুটে উঠে, কত ফুল যায় টুটে, আমি শুধু বহে চলে যাই।পরশ পুলক-রস ভরা রেখে যাই, নাহি দিই ধরা।উড়ে আসে ফুলবাস, লতাপাতা ফেলে শ্বাস,বনে বনে উঠে হা-হুতাশ, চকিতে শুনিতে শুধু পাই, চলে যাই।আমি কভু ফিরে নাহি চাই।