মাঝে মাঝে আসি যে তোমারে গান শিখাবারে-- মনে তব কৌতুক লাগে, অধরের আগে দেখা দেয় একটুকু হাসির কাঁপন। যে-কথাটি আমার আপন এই ছলে হয় সে তোমারি। তারে তারে সুর বাঁধা হয়ে যায় তারি অন্তরে অন্তরে কখন তোমার অগোচরে। চাবি করা চুরি, প্রাণের গোপন দ্বারে প্রবেশের সহজ চাতুরী, সুর দিয়ে পথ বাঁধা যে-দুর্গমে কথা পেত পদে পদে পাষাণের বাধা-- গানের মন্ত্রেতে দীক্ষা যার এই তো তাহার অধিকার। সেই জানে দেবতার অলক্ষিত পথ শূন্যে শূন্যে যেথা চলে মহেন্দ্রের শব্দভেদী রথ। ঘনবর্ষণের পিছে যেমন সে বিদ্যুতের খেলা বিমুখ নিশীথবেলা, অমোঘ বিজয়মন্ত্র হানে দূর দিগন্তের পানে, আঁধারের সংকোচ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মেঘমল্লারের ঝড়ে।
আজ কি তপন তুমি যাবে অস্তাচলে না শুনে আমার মুখে একটিও গান। দাঁড়াও গো, বিদায়ের দুটি কথা বলে আজিকার দিন আমি করি অবসান। থামো ওই সমুদ্রের প্রান্তরেখা-'পরে, মুখে মোর রাখো তব একমাত্র আঁখি। দিবসের শেষ পলে নিমেষের তরে তুমি চেয়ে থাকো আর আমি চেয়ে থাকি। দুজনের আঁখি-'পরে সায়াহ্ন-আঁধার আঁখির পাতার মতো আসুক মুদিয়া, গভীর তিমিরস্নিগ্ধ শান্তির পাথার নিবায়ে ফেলুক আজি দুটি দীপ্ত হিয়া। শেষ গান সাঙ্গ করে থেমে গেছে পাখি, আমার এ গানখানি ছিল শুধু বাকি॥