জ্বালো ওগো, জ্বালো ওগো, সন্ধ্যাদীপ জ্বালো হৃদয়ের এক প্রান্তে ওইটুকু আলো স্বহস্তে জাগায়ে রাখো। তাহারি পশ্চাতে আপনি বসিয়া থাকো আসন্ন এ রাতে যতনে বাঁধিয়া বেণী সাজি রক্তাম্বরে আমার বিক্ষিপ্ত চিত্ত কাড়িবার তরে জীবনের জাল হতে। বুঝিয়াছি আজি বহুকর্মকীর্তিখ্যাতি আয়োজনরাজি শুষ্ক বোঝা হয়ে থাকে, সব হয় মিছে যদি সেই স্তূপাকার উদ্যোগের পিছে না থাকে একটি হাসি; নানা দিক হতে নানা দর্প নানা চেষ্টা সন্ধ্যার আলোতে এক গৃহে ফিরে যদি নাহি রাখে স্থির একটি প্রেমের পায়ে শ্রান্ত নতশির।
মধ্যাহ্নে বিজন বাতায়নে সুদূর গগনে কী দেখে সে ধানের খেতের পরপারে-- নিরালা নদীর পথে দিগন্তে সবুজ অন্ধকারে যেখানে কাঁঠাল জাম নারিকেল বেত প্রসারিয়া চলেছে সংকেত অজানা গ্রামের, সুখ দুঃখ জন্ম মৃত্যু অখ্যাত নামের। অপরাহ্নে ছাদে বসি এলোচুল বুকে পড়ে খসি, গ্রন্থ নিয়ে হাতে উদাস হয়েছে মন সে যে কোন্ কবিকল্পনাতে। সুদূরের বেদনায় অতীতের অশ্রুবাষ্প হৃদয়ে ঘনায়। বীরের কাহিনী না-দেখা জনের লাগি তারে যেন করে বিরহিণী। পূর্ণিমানিশীথে স্রোতে-ভাসা একা তরী যবে সকরুণ সারিগীতে ছায়াঘন তীরে তীরে সুপ্তিতে সুরের ছবি আঁকে উৎসুক আকাঙক্ষা জেগে থাকে নিষুপ্ত প্রহরে, অহৈতুক বারিবিন্দু ঝরে আঁখিকোণে; যুগান্তরপার হতে কোন্ পুরাণের কথা শোনে। ইচ্ছা করে সেই রাতে লিপিখানি লেখে ভূর্জপাতে লেখনীতে ভরি লয়ে দুঃখে-গলা কাজলের কালি-- নাম কি খেয়ালী।