১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪০  উদয়ন [শান্তিনিকেতন]


 

৪ (basakhani gaye laga)


বাসাখানি গায়ে-লাগা আর্মানি গির্জার--

দুই ভাই সাহেবালি জোনাবালি মির্জার।

কাবুলি বেড়াল নিয়ে দু দলের মোক্তার

বেঁধেছে কোমর, কে যে সামলাবে রোখ তার

হানাহানি চলছেই একেবারে বেহোঁশে,

নালিশটা কী নিয়ে যে, জানে না তা কেহ সে।

সে কি লেজ নিয়ে, সে কি গোঁফ নিয়ে তকরার,

হিসেবে কি গোল আছে নখগুলো বখরার।

কিংবা মিয়াঁও ব'লে থাবা তুলে ডেকেছিল--

তখন সামনে তার দু ভাইয়ের কে কে ছিল।

সাক্ষীর ভিড় হল দলে দলে তা নিয়ে,

আওয়াজ যাচাই হল ওস্তাদ আনিয়ে।

কেউ বলে ধা-পা-নি-মা, কেউ বলে ধা-মা-রে--

চাঁই চাঁই বোল দেয়, তবলায় ঘা মারে।

ওস্তাদ ঝেঁকে ওঠে, প্যাঁচ মারে কুস্তির--

জজসাব কী ক'রে যে থাকে বলো সুস্থির।

সমন হয়েছে জারি, কাবুলের সর্দার

চলে এল উটে চড়ে-- পিছে ঝাড়ুবরদার।

উটেতে কামড় দিল, হল তার পা টুটা--

বিলকুল লোকসান হয়ে গেল হাঁটুটা।

খেসারত নিয়ে মাথা তেতে ওঠে আমিরের,

ফউজ পেরিয়ে এল পাঁচিলটা পামিরের।

বাজারে মেলে না আর আখরোট-খোবানি,

কাঁউসিল ঘরে আজ কী নাকানিচোবানি।

ইরানে পড়েছে সাড়া গবেষণাবিভাগে--

এ কাবুলি বিড়ালের নাড়িতে যে কী ভাগে

বংশ রয়েছে চাপা, মেসোপোটোমিয়ারই

মার্জারগুষ্টির হবে সে কি ঝিয়ারি।

এর আদি মাতামহী সে কি ছিল মিশোরি--

নাইল-তটিনী-তট-বিহারিণী কিশোরী

রোঁয়াতে সে ইরানী যে নাহি তাহে সংশয়,

দাঁতে তার এসীরিয়া যখনি সে দংশয়।

কটা চোখ দেখে বলে পণ্ডিতগণেতে,

এখনি পাঠানো চাই Wimবিল্‌ডনেতে।

বাঙালি থিসিসওলা পড়ে গেছে ভাবনায়--

ঠিকুজি মিলবে তার চাটগাঁ কি পাবনায়।

আর্মানি গির্জার আশেপাশে পাড়াতে

কোনোখানে এক তিল ঠাঁই নাই দাঁড়াতে।

কেম্‌ব্রিজ খালি হল, আসে সব স্কলারে--

কী ভীষণ হাড়কাটা করাতের ফলা রে।

বিজ্ঞানীদল এল বর্লিন ঝাঁটিয়ে,

হাতপাকা জন্তুর-নাড়িভুঁড়ি-ঘাঁটিয়ে।

জজ বলে, বিড়ালটা কী রকম জানা চাই,

আইডেন্‌টিটি তার আদালতে আনা চাই।

বিড়ালের দেখা নাই-- ঘরেও না, বনে না;

মিআঁউ আওয়াজটুকু কেউ আর শোনে না।

জজ বলে, সাক্ষীরে কোন্‌খানে ঢুকোলো,

অত বড়ো লেজের কি আগাগোড়া লুকোলো।

পেয়াদা বললে, লেজ গেছে মিউজিয়মে

প্রিভিকৌঁসিলে-দেওয়া আইনের নিয়মে।

জজ বলে, গোঁফ পেলে রবে মোর সম্মান

পেয়াদা বললে, তারো নয় বড়ো কম মান।

মিউনিকে নিয়ে গেছে ছাঁটা গোঁফ যত্নেই,

তারে আর কোনোমতে ফেরাবার পথ নেই।

বিড়াল ফেরার হল, নাই নামগন্ধ;

জজ বলে, তাই ব'লে মামলা কি বন্ধ।

তখনি চৌকি ছেড়ে রেগে করে পাচারি,

থেকে থেকে হুংকারে কেঁপে ওঠে কাছারি।

জজ বলে, গেল কোথা ফরিয়াদী আসামী!

হজুর, পেয়াদা বলে, বেটাদের চাষামি!

শুনি নাকি দুই ভাই উকিলের তাকাদায়

বলে গেছে, আমাদের বুঝি বেঁচে থাকা দায়!

কণ্ঠে এমনি ফাঁস এঁটে দিল জড়িয়ে,

মোক্তারে কী করিবে সাক্ষীরে পড়িয়ে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •