দেবতা জেনে দূরে রই দাঁড়ায়ে, আপন জেনে আদর করি নে। পিতা বলে প্রণাম করি পায়ে, বন্ধু বলে দু-হাত ধরি নে। আপনি তুমি অতি সহজ প্রেমে আমার হয়ে এলে যেথায় নেমে সেথায় সুখে বুকের মধ্যে ধরে সঙ্গী বলে তোমায় বরি নে। ভাই তুমি যে ভায়ের মাঝে প্রভু, তাদের পানে তাকাই না যে তবু, ভাইয়ের সাথে ভাগ ক'রে মোর ধন তোমার মুঠা কেন ভরি নে। ছুটে এসে সবার সুখে দুখে দাঁড়াই নে তো তোমারি সম্মুখে, সঁপিয়ে প্রাণ ক্লান্তিবিহীন কাজে প্রাণসাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ি নে।
ছেঁড়াখোঁড়া মোর পুরোনো খাতায় ছবি আঁকি আমি যা আসে মাথায় যক্ষনি ছুটি পাই। বঙ্কিম মামা বুঝিতে পারে না-- বলে যে, কিছুই যায় না তো চেনা; বলে, কী হয়েছে, ছাই! আমি বলি তারে, এই তো ভালুক, এই দেখো কালো বাঁদরের মুখ, এই দেখো লাল ঘোড়া-- রাজপুত্তুর কাল ভোর হলে দণ্ডক বনে যাবেন যে চ'লে-- রথে হবে ওরে জোড়া। উঁচু হয়ে আছে এই-যে পাহাড়, খোঁচা খোঁচা গায়ে ওঠে বাঁশ-ঝাড়, হেথা সিংহের বাসা। এঁকে বেঁকে দেখো এই নদী চলে, নৌকো এঁকেছি ভেসে যায় জলে, ডাঙা দিয়ে যায় চাষা। ঘাট থেকে জল এনেছে ঘড়ায়-- শিবুঠাকুরের রান্না চড়ায় তিন কন্যা যে এই। সাদা কাগজের চর করে ধূ ধূ, সাদা হাঁস দুটো ব'সে আছে শুধু, কেউ কোত্থাও নেই। গোল ক'রে আঁকা এই দেখো দিখি, সূর্যের ছবি ঠিক হয় নি কি, মেঘ এই দাগ যত। শুধু কালি লেপা দেখিছ এ পাতে-- আঁধার হয়েছে এইখানটাতে, ঠিক সন্ধ্যার মতো। আমি তো পষ্ট দেখি সব-কিছু-- শালবন দেখো এই উঁচুনিচু, মাছগুলো দেখো জলে। "ছবি দেখিতে কি পায় সব লোকে-- দোষ আছে তোর মামারই দু চোখে' বাবা এই কথা বলে।
তারা তোমার নামে বাটের মাঝে মাসুল লয় যে ধরি। দেখি শেষে ঘাটে এসে নাইকো পারের কড়ি। তারা তোমার কাজের তানে নাশ করে গো ধনে প্রাণে, সামান্য যা আছে আমার লয় তা অপহরি। আজকে আমি চিনেছি সেই ছদ্মবেশী-দলে। তারাও আমায় চিনেছে হায় শক্তিবিহীন ব'লে। গোপন মূর্তি ছেড়েছে তাই, লজ্জা শরম আর কিছু নাই, দাঁড়িয়েছে আজ মাথা তুলে পথ অবরোধ করি।