শেষের মধ্যে অশেষ আছে, এই কথাটি মনে আজকে আমার গানের শেষে জাগছে ক্ষণে ক্ষণে। সুর গিয়েছে থেমে তবু থামতে যেন চায় না কভু, নীরবতায় বাজছে বীণা বিনা প্রয়োজনে। তারে যখন আঘাত লাগে, বাজে যখন সুরে-- সবার চেয়ে বড়ো যে গান সে রয় বহুদূরে। সকল আলাপ গেলে থেমে শান্ত বীণায় আসে নেমে, সন্ধ্যা যেমন দিনের শেষে বাজে গভীর স্বনে।
কাকা বলেন, সময় হলে সবাই চলে যায় কোথা সেই স্বর্গ-পারে। বল্ তো কাকী সত্যি তা কি একেবারে? তিনি বলেন, যাবার আগে তন্দ্রা লাগে ঘণ্টা কখন ওঠে বাজি, দ্বারের পাশে তখন আসে ঘাটের মাঝি। বাবা গেছেন এমনি করে কখন ভোরে তখন আমি বিছানাতে। তেমনি মাখন গেল কখন অনেক রাতে। কিন্তু আমি বলছি তোমায় সকল সময় তোমার কাছেই করব খেলা, রইব জোরে গলা ধরে রাতের বেলা। সময় হলে মানব না তো, জানব না তো, ঘণ্টা মাঝির বাজল কবে। তাই কি রাজা দেবেন সাজা আমায় তবে? তোমরা বল, স্বর্গ ভালো সেথায় আলো রঙে রঙে আকাশ রাঙায়, সারা বেলা ফুলের খেলা পারুলডাঙায়! হ'ক না ভালো যত ইচ্ছে-- কেড়ে নিচ্ছে কেই বা তাকে বলো, কাকী? যেমন আছি তোমার কাছেই তেমনি থাকি! ঐ আমাদের গোলাবাড়ি, গোরুর গাড়ি পড়ে আছে চাকা-ভাঙা, গাবের ডালে পাতার লালে আকাশ রাঙা। সেথা বেড়ায় যক্ষী বুড়ী গুড়ি গুড়ি আসশেওড়ার ঝোপে ঝাপে ফুলের গাছে দোয়েল নাচে, ছায়া কাঁপে। নুকিয়ে আমি সেথা পলাই, কানাই বলাই দু-ভাই আসে পাড়ার থেকে। ভাঙা পাড়ি দোলাই নাড়ি ঝেঁকে ঝেঁকে। সন্ধ্যেবেলায় গল্প বলে রাখ কোলে, মিটমিটিয়ে জ্বলে বাতি। চালতা-শাখে পেঁচা ডাকে, বাড়ে রাতি। স্বর্গে যাওয়া দেব ফাঁকি বলছি, কাকী, দেখব আমায় কে কী করে। চিরকালই রইব খালি তোমার ঘরে।