গোধূলি নিঃশব্দে আসি আপন অঞ্চলে ঢাকে যথা কর্মক্লান্ত সংসারের যত ক্ষত, যত মলিনতা, ভগ্নভবনের দৈন্য, ছিন্নবসনের লজ্জা যত-- তব লাগি স্তব্ধ শোক স্নিগ্ধ দুই হাতে সেইমতো প্রসারিত করে দিক অবারিত উদার তিমির আমার এ জীবনের বহু ক্ষুব্ধ দিনযামিনীর স্খলন খণ্ডতা ক্ষতি ভগ্নদীর্ণ জীর্ণতার 'পরে- সব ভালো-মন্দ নিয়ে মোর প্রাণ দিক এক ক'রে বিষাদের একখানি স্বর্ণময় বিশাল বেষ্টনে। আজ কোনো আকাঙক্ষার কোনো ক্ষোভ নাহি থাক মনে, অতীত অতৃপ্তি-পানে যেন নাহি চাই ফিরে ফিরে-- যাহা-কিছু গেছে যাক, আমি চলে যাই ধীরে ধীরে তোমার মিলনদীপ অকম্পিত যেথায় বিরাজে ত্রিভুবনদেবতার ক্লান্তিহীন আনন্দের মাঝে।
প্রভু, তোমার বীণা যেমনি বাজে আঁধার-মাঝে অমনি ফোটে তারা। যেন সেই বীণাটি গভীর তানে আমার প্রাণে বাজে তেমনি ধারা। তখন নূতন সৃষ্টি প্রকাশ হবে কী গৌরবে হৃদয়-অন্ধকারে। তখন স্তরে স্তরে আলোকরাশি উঠবে ভাসি চিত্তগগনপারে। তখন তোমারি সৌন্দর্যছবি ওগো কবি আমায় পড়বে আঁকা- তখন বিস্ময়ের রবে না সীমা ওই মহিমা আর যাবে না ঢাকা। তখন তোমারি প্রসন্ন হাসি পড়বে আসি নবজীবন-'পরে। তখন আনন্দ-অমৃতে তব ধন্য হব চিরদিনের তরে।