দূর রজনীর স্বপন লাগে আজ নূতনের হাসিতে, দূর ফাগুনের বেদন জাগে আজ ফাগুনের বাঁশিতে॥ হায় রে সে কাল হায় রে কখন চলে যায় রে আজ এ কালের মরীচিকায় নতুন মায়ায় ভাসিতে॥ যে মহাকাল দিন ফুরালে আমার কুসুম ঝরালো সেই তোমারি তরুণ ভালে ফুলের মালা পরালো। শুনিয়ে শেষের কথা সে কাঁদিয়ে ছিল হতাশে, তোমার মাঝে নতুন সাজে শূন্য আবার ভরালো। আমরা খেলা খেলেছিলেম, আমরাও গান গেয়েছি। আমরাও পাল মেলেছিলেম, আমরা তরী বেয়েছি। হারায় নি তা হারায় নি বৈতরণী পারায় নি-- নবীন চোখের চপল আলোয় সে কাল ফিরে পেয়েছি।
গান আমার যায় ভেসে যায়---- চাস্ নে ফিরে, দে তারে বিদায়॥ সে যে দখিনহাওয়ায় মুকুল ঝরা, ধুলার আঁচল হেলায় ভরা, সে যে শিশির-ফোঁটার মালা গাঁথা বনের আঙিনায়॥ কাঁদন-হাসির আলোছায়া সারা অলস বেলা-- মেঘের গায়ে রঙের মায়া, খেলার পরে খেলা। ভুলে-যাওয়ার বোঝাই ভরি গেল চলে কতই তরী-- উজান বায়ে ফেরে যদি কে রয় সে আশায়॥
তোমাদের দান যশের ডালায় সব-শেষ সঞ্চয় আমার-- নিতে মনে লাগে ভয়॥ এই রূপলোকে কবে এসেছিনু রাতে, গেঁথেছিনু মালা ঝ'রে-পড়া পারিজাতে, আঁধারে অন্ধ-- এ যে গাঁথা তারি হাতে-- কী দিল এ পরিচয়॥ এরে পরাবে কি কলালক্ষ্মীর গলে সাতনরী হারে যেথায় মানিক জ্বলে। একদা কখন অমরার উৎসবে ম্লান ফুলদল খসিয়া পড়িবে কবে, এ আদর যদি লজ্জার পরাভবে সে দিন মলিন হয়॥