এ শুধু অলস মায়া, এ শুধু মেঘের খেলা, এ শুধু মনের সাধ বাতাসেতে বিসর্জন; এ শুধু আপন মনে মালা গেঁথে ছিঁড়ে ফেলা নিমেষের হাসিকান্না গান গেয়ে সমাপন। শ্যামল পল্লবপাতে রবিকরে সারাবেলা আপনার ছায়া লয়ে খেলা করে ফুলগুলি, এও সেই ছায়া-খেলা বসন্তের সমীরণে। কুহকের দেশে যেন সাধ ক'রে পথ ভুলি। হেথা হোথা ঘুরি ফিরি সারাদিন আনমনে। কারে যেন দেব ব'লে কোথা যেন ফুল তুলি, সন্ধ্যায় মলিন ফুল উড়ে যায় বনে বনে। এ খেলা খেলিবে হায় খেলার সাথি কে আছে? ভুলে ভুলে গান গাই--কে শোনে, কে নাই শোনে-- যদি কিছু মনে পড়ে, যদি কেহ আসে কাছে॥
যাহা-কিছু ছিল সব দিনু শেষ করে ডালাখানি ভরে-- কাল কী আনিয়া দিব যুগল চরণে তাই ভাবি মনে। বসন্তে সকল ফুল নিঃশেষে ফুটায়ে নিয়ে তরু তার পরে এক দিনে দীনহীন, শূন্যে দেবতার পানে চাহে রিক্তকরে। আজি দিন শেষ হলে যদি মোর গান হয় অবসান, কাল প্রাতে এ গানের স্মৃতিসুখলেশ রবে না কি শেষ। শূন্য থালে মৌনকণ্ঠে নতমুখে আসি যদি তোমার সম্মুখে, তখন কি অগৌরবে চাহিবে না একবার ভকতের মুখে। দিই নি কি প্রাণপূর্ণ হৃদিপদ্মখানি পাদপদ্মে আনি? দিই নি কি কোনো ফুল অমর করিয়া অশ্রুতে ভরিয়া। এত গান গাহিয়াছি, তার মাঝে নাহি কি গো হেন কোনো গান আমি চলে গেলে তবু বহিবে যে চিরদিন অনন্ত পরান। সেই কথা মনে করে দিবে না কি নব বরমাল্য তব-- ফেলিবে না আঁখি হতে একবিন্দু জল করুণাকোমল, আমার বসন্তশেষে রিক্তপুষ্প দীনবেশে নীরবে যেদিন ছলছল-আঁখিজলে দাঁড়াইব সভাতলে উপহারহীন।