তোমার বীণায় কত তার আছে কত-না সুরে, আমি তার সাথে আমার তারটি দিব গো জুড়ে। তার পর হতে প্রভাতে সাঁঝে তব বিচিত্র রাগিণীমাঝে আমারো হৃদয় রণিয়া রণিয়া বাজিবে তবে। তোমার সুরেতে আমার পরান জড়ায়ে রবে। তোমার তারায় মোর আশাদীপ রাখিব জ্বালি। তোমার কুসুমে আমার বাসনা দিব গো ঢালি। তার পর হতে নিশীথে প্রাতে তব বিচিত্র শোভার সাথে আমারো হৃদয় জ্বলিবে ফুটিবে, দুলিবে সুখে-- মোর পরানের ছায়াটি পড়িবে তোমার মুখে।
সকালে জাগিয়া উঠি ফুলদানে দেখিনু গোলাপ; প্রশ্ন এল মনে-- যুগ-যুগান্তের আবর্তনে সৌন্দর্যের পরিণামে যে শক্তি তোমারে আনিয়াছে অপূর্ণের কুৎসিতের প্রতি পদে পীড়ন এড়ায়ে, সে কি অন্ধ, সে কি অন্যমনা, সেও কি বৈরাগ্যব্রতী সন্ন্যাসীর মতো সুন্দরে ও অসুন্দরে ভেদ নাহি করে-- শুধু জ্ঞানক্রিয়া, শুধু বলক্রিয়া তার, বোধের নাইকো কোনো কাজ? কারা তর্ক করে বলে, সৃষ্টির সভায় সুশ্রী কুশ্রী বসে আছে সমান আসনে-- প্রহরীর কোনো বাধা নাই। আমি কবি তর্ক নাহি জানি, এ বিশ্বেরে দেখি তার সমগ্র স্বরূপে-- লক্ষকোটি গ্রহতারা আকাশে আকাশে বহন করিয়া চলে প্রকাণ্ড সুষমা, ছন্দ নাহি ভাঙে তার সুর নাহি বাধে, বিকৃতি না ঘটায় স্খলন; ঐ তো আকাশে দেখি স্তরে স্তরে পাপড়ি মেলিয়া জ্যোতির্ময় বিরাট গোলাপ।