মহারাজ ক্ষণেক দর্শন দিতে হবে তোমার নির্জন ধামে। সেথা ডেকে লবে সমস্ত আলোক হতে তোমার আলোতে আমারে একাকী-সর্ব সুখদুঃখ হতে সর্ব সঙ্গ হতে, সমস্ত এ বসুধার কর্মবন্ধ হতে। দেব, মন্দিরে তোমার পশিয়াছি পৃথিবীর সর্বযাত্রীসনে, দ্বার মুক্ত ছিল যবে আরতির ক্ষণে। দীপাবলী নিবাইয়া চলে যাবে যবে নানা পথে নানা ঘরে পূজকেরা সবে, দ্বার রুধ হয়ে যাবে; শান্ত অন্ধকার আমারে মিলায়ে দিবে চরণে তোমার। একখানি জীবনের প্রদীপ তুলিয়া তোমারে হেরিব একা ভুবন ভুলিয়া।
আজ শরতের আলোয় এই যে চেয়ে দেখি মনে হয় এ যেন আমার প্রথম দেখা। আমি দেখলেম নবীনকে, প্রতিদিনের ক্লান্ত চোখ যার দর্শন হারিয়েছে। কল্পনা করছি,-- অনাগত যুগ থেকে তীর্থযাত্রী আমি ভেসে এসেছি মন্ত্রবলে। উজান স্বপ্নের স্রোতে পৌঁছলেম এই মুহূর্তেই বর্তমান শতাব্দীর ঘাটে। কেবলি তাকিয়ে আছি উৎসুক চোখে। আপনাকে দেখছি আপনার বাইরে,-- অন্যযুগের অজানা আমি অভ্যস্ত পরিচয়ের পরপারে। তাই তাকে নিয়ে এত গভীর কৌতূহল। যার দিকে তাকাই চক্ষু তাকে আঁকড়িয়ে থাকে পুষ্পলগ্ন ভ্রমরের মতো। আমার নগ্নচিত্ত আজ মগ্ন হয়েছে সমস্তের মাঝে। জনশ্রুতির মলিন হাতের দাগ লেগে যার রূপ হয়েছে অবলুপ্ত, যা পরেছে তুচ্ছতার মলিন চীর তার সে জীর্ণ উত্তরীয় আজ গেল খ'সে। দেখা দিল সে অস্তিত্বের পূর্ণ মূল্যে। দেখা দিল সে অনির্বচনীয়তায়। যে বোবা আজ পর্যন্ত ভাষা পায়নি জগতের সেই অতি প্রকাণ্ড উপেক্ষিত আমার সামনে খুলেছে তার অচল মৌন, ভোর-হয়ে-ওঠা বিপুল রাত্রির প্রান্তে প্রথম চঞ্চল বাণী জাগল যেন। আমার এতকালের কাছের জগতে আমি ভ্রমণ করতে বেরিয়েছি দূরের পথিক। তার আধুনিকের ছিন্নতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা দিয়েছে চিরকালের রহস্য। সহমরণের বধূ বুঝি এমনি ক'রেই দেখতে পায় মৃত্যুর ছিন্নপর্দার ভিতর দিয়ে নূতন চোখে চিরজীবনের অম্লান স্বরূপ।