তোরা কেউ পারবি নে গো, পারবি নে ফুল ফোটাতে। যতই বলিস, যতই করিস, যতই তারে তুলে ধরিস, ব্যগ্র হয়ে রজনীদিন আঘাত করিস বোঁটাতে-- তোরা কেউ পারবি নে গো, পারবি নে ফুল ফোটাতে। দৃষ্টি দিয়ে বারে বারে ম্লান করতে পারিস তারে, ছিঁড়তে পারিস দলগুলি তার, ধুলায় পারিস লোটাতে-- তোদের বিষম গণ্ডগোলে যদিই-বা সে মুখটি খোলে, ধরবে না রঙ, পারবে না তার গন্ধটুকু ছোটাতে। তোরা কেউ পারবি নে গো, পারবি নে ফুল ফোটাতে। যে পারে সে আপনি পারে, পারে সে ফুল ফোটাতে। সে শুধু চায় নয়ন মেলে দুটি চোখের কিরণ ফেলে, অমনি যেন পূর্ণপ্রাণের মন্ত্র লাগে বোঁটাতে। যে পারে সে আপনি পারে, পারে সে ফুল ফোটাতে। নিশ্বাসে তার নিমেষেতে ফুল যেন চায় উড়ে যেতে, পাতার পাখা মেলে দিয়ে হাওয়ায় থাকে লোটাতে। রঙ যে ফুটে ওঠে কত প্রাণের ব্যাকুলতার মতো, যেন কারে আনতে ডেকে গন্ধ থাকে ছোটাতে। যে পারে সে আপনি পারে, পারে সে ফুল ফোটাতে।
তোমার যে ছায়া তুমি দিলে আরশিরে হাসিমুখ মেজে, সেইক্ষণে অবিকল সেই ছায়াটিরে ফিরে দিল সে যে। রাখিল না কিছু আর, স্ফটিক সে নির্বিকার আকাশের মতো-- সেথা আসে শশী রবি, যায় চলে, তার ছবি কোথা হয় গত। একদিন শুধু মোরে ছায়া দিয়ে, শেষে সমাপিলে খেলা আত্মভোলা বসন্তের উন্মত্ত নিমেষে শুক্ল সন্ধ্যাবেলা। সে ছায়া খেলারই ছলে নিয়েছিনু হিয়াতলে হেলাভরে হেসে, ভেবেছিনু চুপে চুপে ফিরে দিব ছায়ারূপে তোমারি উদ্দেশে। সে ছায়া তো ফিরিল না, সে আমার প্রাণে হল প্রাণবান। দেখি, ধরা পড়ে গেল কবে মোর গানে তোমার সে দান। যদিবা দেখিতে তারে পারিতে না চিনিবারে অয়ি এলোকেশী-- আমার পরান পেয়ে সে আজি তোমারো চেয়ে বহুগুণে বেশি। কেমনে জানিবে তুমি তারে সুর দিয়ে দিয়েছি মহিমা। প্রেমের অমৃতস্নানে সে যে, অয়ি প্রিয়ে, হারায়েছে সীমা। তোমার খেয়াল ত্যেজে পূজার গৌরবে সে যে পেয়েছে গৌরব। মর্তের স্বপন ভুলে অমরাবতীর ফুলে লভিল সৌরভ।