মেঘ্লা শ্রাবণের বাদ্লা রাতি, বাহিরে ঝড় বাতাস, জান্লা রুধি ঘরে জ্বালায়ে বাতি বন্ধু মিলি খেলে তাস। বন্ধু পাঁচ জনে বসিয়া গৃহকোণে চিত্ত বড়োই উদাস, কর্ম হাতে নাই, কভু বা উঠে হাই কভু বা করে হা-হুতাশ। বিরস ম্লান-মুখো, মেজাজ বড়ো রুখো, শেষে বা বাধে হাতাহাতি! আকাশ ঢাকা মেঘে, বাতাস রেগেমেগে বাহিরে করে মাতামাতি। অবন বলে ভাই তর্কে কাজ নাই প্রমারা হোক এক বাজি -- সমর মুদি চোখ বলিল তাই হোক সত্য কহে আছি রাজি। বজ্র দিক জুড়ি করিছে হুড়োমুড়ি হরিশ ভয়ে হত-বুলি, গগন এক ধারে কিছু না বলি কারে পলকে ছবি নিল তুলি।
বাঙাল যখন আসে মোর গৃহদ্বারে, নূতন লেখার দাবি লয়ে বারে বারে; আমি তাঁরে হেঁকে বলি সরোষ গলায়-- শেষ দাঁড়ি টানিয়াছি কাব্যের কলায়। মনে মনে হাসে, তবুও সে ফিরে ফিরে আসে। তারপর এ কী? সকালে উঠিয়া দেখি নির্লজ্জ লাইনগুলো যত বাহির হইয়া আসে গুহা হতে নির্ঝরের মতো। পশ্চিমবঙ্গের কবি দেখিলাম মোর বাঙালের মতো নাই জেদের অপ্রতিহত জোর।
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে পড়ুক ঝরে তোমারি সুরটি আমার মুখের 'পরে বুকের 'পরে। পুরবের আলোর সাথে পড়ুক প্রাতে দুই নয়ানে- নিশীথের অন্ধকারে গভীর ধারে পড়ুক প্রাণে, নিশিদিন এই জীবনের সুখের 'পরে দুঃখের 'পরে শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে পড়ুক ঝরে। যে শাখায় ফুল ফোটে না ফল ধরে না একেবারে তোমার ওই বাদল-বায়ে দিক জাগায়ে সেই শাখারে। যা-কিছু জীর্ণ আমার দীর্ণ আমার জীবনহারা তাহারি স্তরে স্তরে পড়ুক ঝরে সুরের ধারা। নিশিদিন এই জীবনের তৃষার 'পরে ভুখের 'পরে শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে পড়ুক ঝরে।