এক যে ছিল রাজা সেদিন আমায় দিল সাজা। ভোরের রাতে উঠে আমি গিয়েছিলুম ছুটে, দেখতে ডালিম গাছে বনের পিরভু কেমন নাচে। ডালে ছিলেম চড়ে, সেটা ভেঙেই গেল পড়ে। সেদিন হল মানা আমার পেয়ারা পেড়ে আনা, রথ দেখতে যাওয়া, আমার চিঁড়ের পুলি খাওয়া। কে দিল সেই সাজা, জান কে ছিল সেই রাজা?
এক যে ছিল রানী আমি তার কথা সব মানি। সাজার খবর পেয়ে আমায় দেখল কেবল চেয়ে। বললে না তো কিছু, কেবল মুখটি করে নিচু আপন ঘরে গিয়ে সেদিন রইল আগল দিয়ে। হল না তার খাওয়া, কিংবা রথ দেখতে যাওয়া। নিল আমায় কোলে সাজার সময় সারা হলে। গলা ভাঙা-ভাঙা, তার চোখ-দুখানি রাঙা। কে ছিল সেই রানী আমি জানি জানি জানি।
পূর্ণ করি নারী তার জীবনের থালি প্রিয়ের চরণে প্রেম নিঃশেষিয়া দিতে গেল ঢালি, ব্যর্থ হল পথ-খোঁজা-- কহিল, "হে ভগবান, নিষ্ঠুর যে এ অর্ঘ্যের বোঝা; আমার দিবস রাত্রি অসহ্য পেষণে একান্ত পীড়িত আর্ত; তাই সান্ত্বনার অন্বেষণে এসেছি তোমার দ্বারে--এ প্রেম তুমিই লও প্রভু!' "লও লও' বারবার ডেকে বলে, তবু দিতে পারে না যে তাকে কৃপণের ধন-সম শিরা আঁকড়িয়া থাকে। যেমন তুষাররাশি গিরিশিরে লগ্ন রহে, কিছুতে স্রোত না বহে, আপন নিষ্ফল কঠিনতা দেয় তারে ব্যথা, তেমনি সে নারী নিশ্চল-হৃদয়ভারে-ভারী কেঁদে বলে, "কী ধনে আমার প্রেম দামি সে যদি না বুঝেছিল, তুমি অন্তর্যামী, তুমিও কি এরে চিনিবে না? মানবজন্মের সব দেনা শোধ করি লও, প্রভু, আমার সর্বস্ব রত্ন নিয়ে। তুমি যে প্রেমের লোভী মিথ্যা কথা কি এ!' "লও লও' যত বলে খোলে না যে তার হৃদয়ের দ্বার। সারাদিন মন্দিরা বাজায়ে করে গান, "লও তুমি লও ভগবান!'