মৌমাছির মতো আমি চাহি না ভাণ্ডার ভরিবারে বসন্তেরে ব্যর্থ করিবারে। সে তো কভু পায় না সন্ধান কোথা আছে প্রভাতের পরিপূর্ণ দান। তাহার শ্রবণ ভরে আপন গুঞ্জনস্বরে, হারায় সে নিখিলের গান। জানে না ফুলের গন্ধে আছে কোন্ করুণ বিষাদ, সে জানে তা সংগ্রহের পথের সংবাদ। চাহে নি সে অরণ্যের পানে, লতার লাবণ্য নাহি জানে, পড়ে নি ফুলের বর্ণে বসন্তের মর্মবাণী লেখা। মধুকণা লক্ষ্য তার, তারি কক্ষ আছে শুধু শেখা। পাখির মতন মন শুধু উড়িবার সুখ চাহে উধাও উৎসাহে; আকাশের বক্ষ হতে ডানা ভরি তার স্বর্ণ-আলোকের মধু নিতে চায়, নাহি যার ভার, নাহি যার ক্ষয়, নাহি যার নিরুদ্ধ সঞ্চয়, যার বাধা নাই, যারে পাই তবু নাহি পাই-- যার তরে নহে লোভ, নহে ক্ষোভ, নহে তীক্ষ্ণ রিষ নহে শূল, নহে গুপ্ত বিষ।
আমার খোকার কত যে দোষ সে-সব আমি জানি, লোকের কাছে মানি বা নাই মানি। দুষ্টামি তার পারি কিম্বা নারি থামাতে, ভালোমন্দ বোঝাপড়া তাতে আমাতে। বাহির হতে তুমি তারে যেমনি কর দুষী যত তোমার খুশি, সে বিচারে আমার কী বা হয়। খোকা ব'লেই ভালোবাসি, ভালো ব'লেই নয়। খোকা আমার কতখানি সে কি তোমরা বোঝ। তোমরা শুধু দোষ গুণ তার খোঁজ। আমি তারে শাসন করি বুকেতে বেঁধে, আমি তারে কাঁদাই যে গো আপনি কেঁদে। বিচার করি, শাসন করি, করি তারে দুষী আমার যাহা খুশি। তোমার শাসন আমরা মানি নে গো। শাসন করা তারেই সাজে সোহাগ করে যে গো।