বহুরে যা এক করে, বিচিত্রেরে করে যা সরস, প্রভূতেরে করি আনে নিজ ক্ষুদ্র তর্জনীর বশ, বিবিধপ্রয়াসক্ষুব্ধ দিবসেরে লয়ে আসে ধীরে সুপ্তিসুনিবিড় শান্ত স্বর্ণময় সন্ধ্যার তিমিরে ধ্রুবতারাদীপদীপ্ত সুতৃপ্ত নিভৃত অবসানে, বহুবাক্যব্যাকুলতা ডুবায় যা একখানি গানে বেদনার সুধারসে-সে প্রেম হতে মোরে, প্রিয়া, রেখো না বঞ্চিত করি; প্রতিদিন থাকিয়ো জাগিয়া; আমার দিনান্ত-মাঝে কঙ্কণের কনককিরণ নিদ্রার আঁধারপটে আঁকি দিবে সোনার স্বপন; তোমার চরণপাত মোর স্তব্ধ সায়াহ্ন-আকাশে নিঃশব্দে পড়িবে ধরা আরক্তিম অলক্ত-আভাসে; এ জীবন নিয়ে যাবে অনিমেষ নয়নের টানে তোমার আপন কক্ষে পরিপূর্ণ মরণের পানে।
বৈকালবেলা ফসল-ফুরানো শূন্য খেতে বৈশাখে যবে কৃপণ ধরণী রয়েছে তেতে, ছেড়ে তার বন জানি নে কখন কী ভুল ভুলি শুষ্ক ধূলির ধূসর দৈন্যে এসেছিল বুল্বুলি। সকালবেলার স্মৃতিখানি মনে বহিয়া বুঝি তরুণ দিনের ভরা আতিথ্য বেড়ালো খুঁজি। অরুণে শ্যামলে উজ্জ্বল সেই পূর্ণতারে মিথ্যা ভাবিয়া ফিরে যাবে সে কি রাতের অন্ধকারে। তবুও তো গান করে গেল দান কিছু না পেয়ে। সংশয়-মাঝে কী শুনায়ে গেল কাহারে চেয়ে। যাহা গেছে সরে কোনো রূপ ধ'রে রয়েছে বাকি, এই সংবাদ বুঝি মনে মনে জানিতে পেরেছে পাখি। প্রভাতবেলার যে ঐশ্বর্য রাখে নি কণা, এসেছিল সে যে, হারায় না কভু সে সান্ত্বনা। সত্য যা পাই ক্ষণেকের তরে ক্ষণিক নহে। সকালের পাখি বিকালের গানে এ আনন্দই বহে।
চপলারে আমি অনেক ভাবিয়া দূরেতে রাখিয়া এলেম তারে, রূপ-ফাঁদ হতে পালাইতে তার, প্রণয়ে ডুবাতে মদিরা-ধারে। এত দূরে এসে বুঝিনু এখন এখনো ঘুচে নি প্রণয়-ঘোর, মাথায় যদিও চড়েছে মদিরা প্রণয় রয়েছে হৃদয়ে মোর। যুবতীর শেষে লইনু শরণ মাগিনু সহায় তার, অনেক ভাবি সে কহিল তখন "চপলা নারীর সার।' আমি কহিলাম "সে কথা তোমার কহিতে হবে না মোরে-- দোষ যদি কিছু বলিবারে পারো শুনি প্রণিধান করে।' যুবতী কহিল "তাও কভু হয়? যদি বলি দোষ আছে-- নামের আমার কুযশ হইবে কহিনু তোমার কাছে।' এখন তো আর নাই কোনো আশা হইয়াছি অসহায়-- চপলা আমার মরমে মরমে বাণ বিঁধিতেছে, হায়! দলে মিশি তার ইন্দ্রিয় আমার বিরোধী হয়েছে মোর, যুবতী আমার--বলিছে আমারে রূপের অধীন ঘোর!