আজ এই দিনের শেষে সন্ধ্যা যে ওই মানিকখানি পরেছিল চিকন কালো কেশে গেঁথে নিলেম তারে এই তো আমার বিনিসুতার গোপন গলার হারে। চক্রবাকের নিদ্রানীরব বিজন পদ্মাতীরে এই সে সন্ধ্যা ছুঁইয়ে গেল আমার নতশিরে নির্মাল্য তোমার আকাশ হয়ে পার; ওই যে মরি মরি তরঙ্গহীন স্রোতের 'পরে ভাসিয়ে দিল তারার ছায়াতরী; ওই যে সে তার সোনার চেলি দিল মেলি রাতের আঙিনায় ঘুমে অলস কায়; ওই যে শেষে সপ্তঋষির ছায়াপথে কালো ঘোড়ার রথে উড়িয়ে দিয়ে আগুন-ধূলি নিল সে বিদায়; একটি কেবল করুণ পরশ রেখে গেল একটি কবির ভালে; তোমার ওই অনন্ত মাঝে এমন সন্ধ্যা হয় নি কোনোকালে, আর হবে না কভু। এমনি করেই প্রভু এক নিমেষের পত্রপুটে ভরি চিরকালের ধনটি তোমার ক্ষণকালে লও যে নূতন করি।
মাটির ছেলে হয়ে জন্ম, শহর নিল মোরে পোষ্যপুত্র ক'রে। ইঁটপাথরের আলিঙ্গনের রাখল আড়ালটিকে আমার চতুর্দিকে। বই প'ড়ে তাই পেতে হত ভ্রমণকারীর দেখা ছাদের উপর একা। কষ্ট তাদের, বিপদ তাদের, তাদের শঙ্কা যত লাগত নেশার মত। পথিক যে জন পথে পথেই পায় সে পৃথিবীকে, মুক্ত সে চৌদিকে। চলার ক্ষুধায় চলতে সে চায় দিনের পরে দিনে অচেনাকেই চিনে। লড়াই ক'রে দেশ করে জয়, বহায় রক্তধারা, ভূপতি নয় তারা। পলে পলে পার যারা হয় মাটির পরে মাটি প্রত্যেক পদ হাঁটি-- নাইকো সেপাই, নাইকো কামান, জয়পতাকা নাহি-- আপন বোঝা বাহি অপথেও পথ পেয়েছে, অজানাতে জানা, মানে নাইকো মানা-- মরু তাদের, মেরু তাদের, গিরি অভ্রভেদী তাদের বিজয়বেদী। সবার চেয়ে মানুষ ভীষণ; সেই মানুষের ভয় ব্যাঘাত তাদের নয়। তারাই ভূমির বরপুত্র, তাদের ডেকে কই, তোমরা পৃথ্বীজয়ী।
দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে-- নইলে কি আর পারব তোমার চরণ ছুঁতে। তোমায় দিতে পূজার ডালি বেড়িয়ে পড়ে সকল কালি, পরান আমার পারি নে তাই পায়ে থুতে। এতদিন তো ছিল না মোর কোনো ব্যথা, সর্ব অঙ্গে মাখা ছিল মলিনতা। আজ ওই শুভ্র কোলের তরে ব্যাকুল হৃদয় কেঁদে মরে দিয়ো না গো, দিয়ো না আর ধুলায় শুতে।