আপনি কণ্টক আমি, আপনি জর্জর। আপনার মাঝে আমি শুধু ব্যথা পাই। সকলের কাছে কেন যাচি গো নির্ভর-- গৃহ নাই, গৃহ নাই, মোর গৃহ নাই। অতি তীক্ষ্ণ অতি ক্ষুদ্র আত্ম-অভিমান সহিতে পারে না হায় তিল অসম্মান। আগেভাগে সকলের পায়ে ফুটে যায় ক্ষুদ্র ব'লে পাছে কেহ জানিতে না পায়। বরঞ্চ আঁধারে রব ধুলায় মলিন, চাহি না চাহি না এই দীন অহংকার-- আপন দারিদ্র৻ে আমি রহিব বিলীন, বেড়াব না চেয়ে চেয়ে প্রসাদ সবার। আপনার মাঝে যদি শান্তি পায় মন বিনীত ধুলার শয্যা সুখের শয়ন॥
কিশোরগাঁয়ের পুবের পাড়ায় বাড়ি পিস্নি বুড়ি চলেছে গ্রাম ছাড়ি। একদিন তার আদর ছিল, বয়স ছিল ষোলো, স্বামী মরতেই বাড়িতে বাস অসহ্য তার হল। আর-কোনো ঠাঁই হয়তো পাবে আর-কোনো এক বাসা, মনের মধ্যে আঁকড়ে থাকে অসম্ভবের আশা। অনেক গেছে ক্ষয় হয়ে তার, সবাই দিল ফাঁকি, অল্প কিছু রয়েছে তার বাকি। তাই দিয়ে সে তুলল বেঁধে ছোট্ট বোঝাটাকে, জড়িয়ে কাঁথা আঁকড়ে নিল কাঁখে। বাঁ হাতে এক ঝুলি আছে, ঝুলিয়ে নিয়ে চলে, মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠে বসে ধূলির তলে। শুধাই যবে, কোন্ দেশেতে যাবে, মুখে ক্ষণেক চায় সকরুণ ভাবে; কয় সে দ্বিধায়, "কী জানি ভাই, হয়তো আলম্ডাঙা, হয়তো সান্কিভাঙা, কিংবা যাব পাটনা হয়ে কাশী।" গ্রাম-সুবাদে কোন্কালে সে ছিল যে কার মাসি, মণিলালের হয় দিদিমা, চুনিলালের মামি-- বলতে বলতে হঠাৎ যে যায় থামি, স্মরণে কার নাম যে নাহি মেলে। গভীর নিশাস ফেলে চুপটি ক'রে ভাবে, এমন করে আর কতদিন যাবে। দূরদেশে তার আপন জনা, নিজেরই ঝঞ্ঝাটে তাদের বেলা কাটে। তারা এখন আর কি মনে রাখে এতবড়ো অদরকারি তাকে। চোখে এখন কম দেখে সে, ঝাপসা যে তার মন, ভগ্নশেষের সংসারে তার শুকনো ফুলের বন। স্টেশন-মুখে গেল চলে পিছনে গ্রাম ফেলে, রাত থাকতে, পাছে দেখে পাড়ায় মেয়ে ছেলে। দূরে গিয়ে, বাঁশবাগানের বিজন গলি বেয়ে পথের ধারে বসে পড়ে, শূন্যে থাকে চেয়ে।