আমার ভুবন তো আজ হল কাঙাল, কিছু তো নাই বাকি, ওগো নিঠুর, দেখতে পেলে তা কি॥ তার সব ঝরেছে, সব মরেছে, জীর্ণ বসন ওই পরেছে-- প্রেমের দানে নগ্ন প্রাণের লজ্জা দেহো ঢাকি॥ কুঞ্জে তাহার গান যা ছিল কোথায় গেল ভাসি। এবার তাহার শূন্য হিয়ায় বাজাও তোমার বাঁশি। তার দীপের আলো কে নিভালো, তারে তুমি জ্বালো জ্বালো-- আমার আপন আঁধার আমার আঁখিরে দেয় ফাঁকি॥
বোলো না, বোলো না, বোলো না, আমি দয়াময়ী। মিথ্যা, মিথ্যা, মিথ্যা। বোলো না। এ কারাপ্রাচীরে শিলা আছে যত নহে তা কঠিন আমার মতো। আমি দয়াময়ী! মিথ্যা, মিথ্যা, মিথ্যা।
অকারণে অকালে মোর পড়ল যখন ডাক তখন আমি ছিলেম শয়ন পাতি। বিশ্ব তখন তারার আলোয় দাঁড়ায়ে নির্বাক, ধরায় তখন তিমিরগহন রাতি। ঘরের লোকে কেঁদে কইল মোরে, "আঁধারে পথ চিনবে কেমন ক'রে?' আমি কইনু, "চলব আমি নিজের আলো ধরে, হাতে আমার এই-যে আছে বাতি।' বাতি যতই উচ্চ শিখায় জ্বলে আপন তেজে চোখে ততই লাগে আলোর বাধা, ছায়ায় মিশে চারি দিকে মায়া ছড়ায় সে-যে-- আধেক দেখা করে আমায় আঁধা। গর্বভরে যতই চলি বেগে আকাশ তত ঢাকে ধুলার মেঘে, শিখা আমার কেঁপে ওঠে অধীর হাওয়া লেগে-- পায়ে পায়ে সৃজন করে ধাঁধা ॥ হঠাৎ শিরে লাগল আঘাত বনের শাখাজালে, হঠাৎ হাতে নিবল আমার বাতি। চেয়ে দেখি পথ হারিয়ে ফেলেছি কোন্ কালে-- চেয়ে দেখি তিমিরগহন রাতি। কেঁদে বলি মাথা করে নিচু, "শক্তি আমার রইল না আর কিছু!' সেই নিমেষে হঠাৎ দেখি কখন পিছু পিছু এসেছ মোর চিরপথের সাথি ॥