প্রকৃতি পুরুষ
Others
জগৎসৃষ্টির যে নিয়ম, আমাদের ভাবসৃষ্টিরও সেই নিয়ম। মনোযোগ করিয়া দেখিলে দেখা যায় আমাদের মাথার মধ্যে প্রকৃতি পুরুষ দুই জনে বাস করেন। এক জন ভাবের বীজ নিক্ষেপ করেন,আর এক জন তাহাই বহন করিয়া, পালন করিয়া, পোষণ করিয়া তাহাকে গঠিত করিয়া তুলেন। এক জন সহসা একটা সুর গাহিয়া উঠিন, আর এক জন সেই সুরটিকে গ্রহণ করিয়া , সেই সুরকে গ্রাম করিয়া,সেই সুরের ঠাটে তাঁহার রাগিণী বাঁধিতে থাকেন। এক জন সহসা একটি স্ফুলিঙ্গ মাত্র নিক্ষেপ করেন, আর এক জন সেই স্ফুলিঙ্গটিকে লইয়া ইন্ধনের মধ্যে নিবিষ্ট করিয়া তাহাতে ফুঁ দিয়া তাহাকে আগুe করিয়া তোলেন।
এমন অনেক সময় হয়,যখন আমাদের হৃদয়ে একটি ভাবের আদিম অস্ফুট মুর্ত্তি দেখা দেয়, মুহুর্তের মধ্যেই তাহাকে হয়ত বিসর্জন দিয়াছি, তাহাকে হয়ত বিস্মৃত হইয়াছি, আমাদের চেতনার রাজ্য হইতে হয়ত সে একেবারে নির্বাসিত হইয়া গিয়াছে -- অবশেষে বহুদিন পরে এক দিন সহসা সেই বিস্মৃত পরিত্যক্ত অস্ফুট ভাব,পূর্ণ আকার ধারণ করিয়া, সর্ব্বাঙ্গসুন্দর হইয়া আমাদের চিত্তে বিকশিত হইয়া উঠে । সেই উপেক্ষিত ভাবকে এত দিন আমাদের ভাবরাজ্যের প্রকৃতি যত্নের সহিত বহন করিতেছিলেন,পোষন করিতেছিলেন, বুকে তুলিয়া লইয়া স্তন দান করিতেছিলেন, অথচ আমরা তাহাকে দেখিতেও পাই নাই, জানিতেও পারি নাই । তেমনি আবার এমন অনেক সময় হয় যখন আমাদের মনে হয় একটি ভাববিশেষ এই মাত্র বুঝি আমাদের হৃদয়ে আবিরভূত হইল, আমাদের হৃদয়রাজ্যে এই বুঝি তার প্রথম পদার্পণ, কিন্তু আসলে হয়ত আমরা ভুলিয়া গেছি, কিম্বা হয়ত জানিতেও পারি নাই, কখন সেই ভাবের প্রথম অদৃশ্য বীজ আমাদের হৃদয়ে রোপিত হয় --কিছু কাল পরিপুষ্ট হইলে তবে আমরা তাহাকে দেখিতে পাইলাম ভাবিয়া দেখিতে গেলে,আমরা জগৎ হইতে আরম্ভ করিয়া আমাদের নিজ-হৃদয়ের ক্ষুদ্রতম বৃত্তিটি পর্য্যন্ত,কোন পদার্থের আদি মুহুর্ত্ত জানিতে পারি না, আমাদের নিজের ভাবের আরম্ভ ও আমরা জানিতে পারি না -- আমাদের চক্ষে যখন কোন পদার্থের আরম্ভ প্রতিভাত হইল তাহার পূর্ব্বেও তাহার আরম্ভ হইয়াছিল । এই জন্যই বুঝি আমাদের মর্ত্ত্য-হৃদয়ের স্বভাব আলোচনা করিয়া আমাদের পুরাতন ঋষিগণ সন্দেহ-আকুল হইয়া সৃষ্টি সম্বন্ধে এইরূপ বলিয়াছিলেন --
আরো দেখুন