এবার তোরা আমার যাবার বেলাতে সবাই জয়ধ্বনি কর্। ভোরের আকাশ রাঙা হল রে, আমার পথ হল সুন্দর। কী নিয়ে বা যাব সেথা ওগো তোরা ভাবিস নে তা, শূন্য হাতেই চলব, বহিয়ে আমার ব্যাকুল অন্তর। মালা পরে যাব মিলন-বেশে আমার পথিক-সজ্জা নয়। বাধা বিপদ আছে মাঝের দেশে, মনে রাখি নে সেই ভয়। যাত্রা যখন হবে সারা উঠবে জ্বলে সন্ধ্যাতারা, পুরবীতে করুণ বাঁশরি দ্বারে বাজবে মধুর স্বর।
আমি যারে ভালোবাসি সে ছিল এই গাঁয়ে, বাঁকা পথের ডাহিন পাশে, ভাঙা ঘাটের বাঁয়ে। কে জানে এই গ্রাম, কে জানে এর নাম, খেতের ধারে মাঠের পারে বনের ঘন ছায়ে-- শুধু আমার হৃদয় জানে সে ছিল এই গাঁয়ে। বেণুশাখারা আড়াল দিয়ে চেয়ে আকাশ-পানে কত সাঁঝের চাঁদ-ওঠা সে দেখেছে এইখানে। কত আষাঢ় মাসে ভিজে মাটির বাসে বাদলা হাওয়া বয়ে গেছে তাদের কাঁচা ধানে। সে-সব ঘনঘটার দিনে সে ছিল এইখানে। এই দিঘি, ওই আমের বাগান, ওই-যে শিবালয়, এই আঙিনা ডাক-নামে তার জানে পরিচয়। এই পুকুরে তারি, সাঁতার-কাটা বারি, ঘাটের পথরেখা তারি চরণ-লেখা-ময়। এই গাঁয়ে সে ছিল কে সেই জানে পরিচয়। এই যাহারা কলস নিয়ে দাঁড়ায় ঘাটে আসি এরা সবাই দেখেছিল তারি মুখের হাসি। কুশল পুছি তারে দাঁড়াত তার দ্বারে লাঙল কাঁধে চলছে মাঠে ওই-যে প্রাচীন চাষি। সে ছিল এই গাঁয়ে আমি যারে ভালোবাসি। পালের তরী কত-যে যায় বহি দখিনবায়ে, দূর প্রবাসের পথিক এসে বসে বকুলছায়ে। পারের যাত্রিদলে খেয়ার ঘাটে চলে, কেউ গো চেয়ে দেখে না ওই ভাঙা ঘাটের বাঁয়ে। আমি যারে ভালোবাসি সে ছিল এই গাঁয়ে।