জীবনে যা চিরদিন রয়ে গেছে আভাসে প্রভাতের আলোকে যা ফোটে নাই প্রকাশে, জীবনের শেষ দানে জীবনের শেষ গানে, হে দেবতা, তাই আজি দিব তব সকাশে, প্রভাতের আলোকে যা ফোটে নাই প্রকাশে। কথা তারে শেষ করে পারে নাই বাঁধিতে, গান তারে সুর দিয়ে পারে নাই সাধিতে। কী নিভৃতে চুপে চুপে মোহন নবীনরূপে নিখিল নয়ন হতে ঢাকা ছিল, সখা, সে। প্রভাতের আলোকে তো ফোটে নাই প্রকাশে। ভ্রমেছি তাহারে লয়ে দেশে দেশে ফিরিয়া, জীবনে যা ভাঙাগড়া সবি তারে ঘিরিয়া। সব ভাবে সব কাজে আমার সবার মাঝে শয়নে স্বপনে থেকে তবু ছিল একা সে। প্রভাতের আলোকে তো ফোটে নাই প্রকাশে। কত দিন কত লোকে চেয়েছিল উহারে, বৃথা ফিরে গেছে তারা বাহিরের দুয়ারে আর কেহ বুঝিবে না, তোমা সাথে হবে চেনা সেই আশা লয়ে ছিল আপনারি আকাশে, প্রভাতের আলোকে তো ফোটে নাই প্রকাশে।
এই কথাটা ধরে রাখিস মুক্তি তোরে পেতেই হবে, যে পথ গেছে পারের পানে সে পথে তোর যেতেই হবে। অভয়-মনে কণ্ঠ ছাড়ি গান গেয়ে তুই দিবি পাড়ি, খুশি হয়ে ঝড়ের হাওয়ায় ঢেউ যে তোরে খেতেই হবে। পাকের ঘোরে ঘোরায় যদি ছুটি তোরে পেতেই হবে। চলার পথে কাঁটা থাকে দ'লে তোমায় যেতেই হবে। সুখের আশা আঁকড়ে লয়ে মরিস নে তুই ভয়ে ভয়ে, জীবনকে তোর ভরে নিতে মরণ-আঘাত খেতেই হবে।
অসীম আকাশে মহাতপস্বী মহাকাল আছে জাগি। আজিও যাহারে কেহ নাহি জানে, দেয় নি যে দেখা আজো কোনোখানে, সেই অভাবিত কল্পনাতীত আবির্ভাবের লাগি মহাকাল আছে জাগি। বাতাসে আকাশে যে নবরাগিণী জগতে কোথাও কখনো জাগে নি রহস্যলোকে তারি গান সাধা চলে অনাহত রবে। ভেঙে যাবে বাঁধ স্বর্গপুরের, প্লাবন বহিবে নূতন সুরের, বধির যুগের প্রাচীন প্রাচীর ভেসে চলে যাবে তবে। যার পরিচয় কারো মনে নাই, যার নাম কভু কেহ শোনে নাই, না জেনে নিখিল পড়ে আছে পথে যার দরশন মাগি-- তারি সত্যের অপরূপ রসে চমকিবে মন অভূত পরশে, মৃত পুরাতন জড় আবরণ মুহূর্তে যাবে ভাগি, যুগ যুগ ধরি তাহার আশায় মহাকাল আছে জাগি।