তোমার লেখনী যেন ন্যায়দণ্ড ধরে শত্রু মিত্র নির্বিভেদে সকলের 'পরে। স্বজাতির সিংহাসন উচ্চ করি গড়ো, সেই সঙ্গে মনে রেখো সত্য আরো বড়ো। স্বদেশেরে চাও যদি তারো ঊর্ধ্বে ওঠো, কোরো না দেশের কাছে মানুষেরে ছোটো।
রাজা করে রণযাত্রা, বাজে ভেরি, বাজে করতাল-- কম্পমান বসুন্ধরা। মন্ত্রী ফেলি ষড়যন্ত্রজাল রাজ্যে রাজ্যে বাধায় জটিল গ্রন্থি। বাণিজ্যের স্রোত ধরণী বেষ্টন করে জোয়ার-ভাঁটায়। পণ্যপোত ধায় সিন্ধুপারে-পারে। বীরকীর্তিস্তম্ভ হয় গাঁথা লক্ষ লক্ষ মানবকঙ্কালস্তূপে, ঊর্ধ্বে তুলি মাথা চূড়া তার স্বর্গ-পানে হানে অট্টহাস। পণ্ডিতেরা-- আক্রমণ করে বারম্বার পুঁথির-প্রাচীর-ঘেরা দুর্ভেদ্য বিদ্যার দুর্গ। খ্যাতি তার ধায় দেশে দেশে। হেথা গ্রামপ্রান্তে নদী বহি চলে প্রান্তরের শেষে ক্লান্ত স্রোতে। তরীখানি তুলি লয়ে নববধূটিরে চলে দূর পল্লী-পানে। সূর্য অস্ত যায়। তীরে তীরে স্তব্ধ মাঠ। দুরুদুরু বালিকার হিয়া। অন্ধকারে ধীরে ধীরে সন্ধ্যাতারা দেখা দেয় দিগন্তের ধারে।
হে সুন্দরী, হে শিখা মহতী, তোমার অরূপ জ্যোতি রূপ লবে আমার জীবনে, তারি লাগি একমনে রচিলাম এই দীপখানি, মূর্তিমতী এই মোর অভ্যর্থনাবাণী। এসো এসো করো অধিষ্ঠান মোর দীর্ঘ জীবনের করো গো চরম বরদান। হয় নাই যোগ্য তব, কতবার ভাঙিয়াছি আবার গড়েছি অভিনব -- মোর শক্তি আপনারে দিয়েছে ধিক্কার। সময় নাহি যে আর, নিদ্রাহারা প্রহর-যে একে একে হয় অপগত, তাই আজ সমাপিনু ব্রত। গ্রহণ করো এ মোর চিরজীবনের রচনারে ক্ষণকাল স্পর্শ করো তারে। তার পরে রেখে যাব এ জন্মের এক সার্থকতা, চিরন্তন সুখ মোর, এই মোর চিরন্তন ব্যথা।