ফুরিয়ে গেল পৌষের দিন; কৌতূহলী ভোরের আলো কুয়াশার আবরণ দিলে সরিয়ে। হঠাৎ দেখি শিশিরে-ভেজা বাতাবি গাছে ধরেছে কচি পাতা; সে যেন আপনি বিস্মিত। একদিন তমসার কূলে বাল্মীকি আপনার প্রথম নিশ্বসিত ছন্দে চকিত হয়েছিলেন নিজে,-- তেমনি দেখলেম ওকে। অনেকদিনকার নিঃশব্দ অবহেলা থেকে অরুণ-আলোতে অকুণ্ঠিত বাণী এনেছে এই কয়টি কিশলয়; সে যেন সেই একটুখানি কথা তুমিই বলতে পারতে, কিন্তু না ব'লে গিয়েছ চলে। সেদিন বসন্ত ছিল অনতিদূরে; তোমার আমার মাঝখানে ছিল আধ-চেনার যবনিকা কেঁপে উঠল সেটা মাঝে মাঝে; মাঝে মাঝে তার একটা কোণ গেল উড়ে; দুরন্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ বাতাস, তবু সরাতে পারেনি অন্তরাল। উচ্ছৃঙ্খল অবকাশ ঘটল না; ঘণ্টা গেল বেজে, সায়াহ্নে তুমি চলে গেলে অব্যক্তের অনালোকে।
এক দিন গরজিয়া কহিল মহিষ, ঘোড়ার মতন মোর থাকিবে সহিস। একেবারে ছাড়িয়াছি মহিষি-চলন, দুই বেলা চাই মোর দলন-মলন। এই ভাবে প্রতিদিন, রজনী পোহালে, বিপরীত দাপাদাপি করে সে গোহালে। প্রভু কহে,চাই বটে! ভালো, তাই হোক! পশ্চাতে রাখিল তার দশ জন লোক। দুটো দিন না যাইতে কেঁদে কয় মোষ, আর কাজ নেই প্রভু, হয়েছে সন্তোষ। সহিসের হাত হতে দাও অব্যাহতি, দলন-মলনটার বাড়াবাড়ি অতি।