আলমোড়া, ২২ বৈশাখ, ১৩৪৪


 

        জন্মদিন (jonmodin)


দৃষ্টিজালে জড়ায় ওকে হাজারখানা চোখ,

          ধ্বনির ঝড়ে বিপন্ন ওই লোক।

জন্মদিনের মুখর তিথি যারা ভুলেই থাকে,

          দোহাই ওগো, তাদের দলে লও এ মানুষটাকে--

সজনে পাতার মতো যাদের হালকা পরিচয়,

          দুলুক খসুক শব্দ নাহি হয়।

          সবার মাঝে পৃথক ও যে ভিড়ের কারাগারে

                   খ্যাতি-বেড়ির নিরন্ত ঝংকারে।

          সবাই মিলে নানা রঙে রঙিন করছে ওরে,

                   নিলাজ মঞ্চে রাখছে তুলে ধরে,

                   আঙুল তুলে দেখাচ্ছে দিনরাত;

কোথায় লুকোয় ভেবে না পায়, আড়াল ভূমিসাৎ।

                   দাও-না ছেড়ে ওকে

স্নিগ্ধ -আলো শ্যামল-ছায়া বিরল-কথার লোকে,

                   বেড়াহীন বিরাট ধূলি-'পর,

সেই যেখানে মহাশিশুর আদিম খেলাঘর।

ভোরবেলাকার পাখির ডাকে প্রথম খেয়া এসে

          ঠেকল যখন সব-প্রথমের চেনাশোনার দেশে,

নামল ঘাটে যখন তারে সাজ রাখে নি ঢেকে,

ছুটির আলো নগ্ন গায়ে লাগল আকাশ থেকে--

          যেমন করে লাগে তরীর পালে,

যেমন লাগে অশোক গাছের কচি পাতার ডালে।

          নাম ভোলা ফুল ফুটল ঘাসে ঘাসে

                   সেই প্রভাতের সহজ অবকাশে।

ছুটির যজ্ঞে পুষ্পহোমে জাগল বকুলশাখা,

ছুটির শূন্যে ফাগুনবেলা মেলল সোনার পাখা।

ছুটির কোণে গোপনে তার নাম

আচম্‌কা সেই পেয়েছিল মিষ্টিসুরের দাম;

কানে কানে সে নাম ডাকার ব্যথা উদাস করে

          চৈত্রদিনের স্তব্ধ দুইপ্রহরে।

আজ সবুজ এই বনের পাতায় আলোর ঝিকিঝিকি

          সেই নিমেষের তারিখ দিল লিখি।

তাহারে ডাক দিয়েছিল পদ্মানদীর ধারা,

কাঁপন-লাগা বেণুর শিরে দেখেছে শুকতারা;

          কাজল-কালো মেঘের পুঞ্জ সজল সমীরণে

নীল ছায়াটি বিছিয়েছিল তটের বনে বনে;

          ও দেখেছে গ্রামের বাঁকা বাটে

          কাঁখে কলস মুখর মেয়ে চলে স্নানের ঘাটে;

          

          সর্ষেতিসির খেতে

দুইরঙা সুর মিলেছিল অবাক আকাশেতে;

          তাই দেখেছে চেয়ে চেয়ে অস্তরবির রাগে--

          বলেছিল, এই তো ভালো লাগে।

সেই-যে ভালো-লাগাটি তার যাক সে রেখে পিছে,

কীর্তি যা সে গেঁথেছিল হয় যদি হোক মিছে,

          না যদি রয় নাই রহিল নাম--

এই মাটিতে রইল তাহার বিস্মিত প্রণাম।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •