গাজিপুর, ১৩ বৈশাখ, ১৮৮৮


 

               নিষ্ঠুর সৃষ্টি (nishthur srishti)


মনে হয় সৃষ্টি বুঝি বাঁধা নাই নিয়মনিগড়ে,

           আনাগোনা মেলামেশা সবই অন্ধ দৈবের ঘটনা।

                     এই ভাঙে, এই গড়ে,

                     এই উঠে, এই পড়ে--

           কেহ নাহি চেয়ে দেখে কার কোথা বাজিছে বেদনা।

           মনে হয়, যেন ওই আবারিত শূন্যতলপথে

           অকস্মাৎ আসিয়াছে সৃজনের বন্যা ভয়ানক--

                     অজ্ঞাত শিখর হতে

                     সহসা প্রচণ্ড স্রোতে

           ছুটে আসে সূর্য চন্দ্র, ধেয়ে আসে লক্ষ কোটি লোক।

           কোথাও পড়েছে আলো, কোথাও বা অন্ধকার নিশি,

           কোথাও সফেন শুভ্র, কোথাও বা আবর্ত আবিল,

                     সৃজনে প্রলয়ে মিশি

                     আক্রমিছে দশ দিশি--

           অনন্ত প্রশান্ত শূন্য তরঙ্গিয়া করিছে ফেনিল।

           মোরা শুধু খড়কুটো স্রোতোমুখে চলিয়াছি ছুটি,

           অর্ধ পলকের তরে কোথাও দাঁড়াতে নাহি ঠাঁই।

                     এই ডুবি, এই উঠি,

                     ঘুরে ঘুরে পড়ি লুটি--

           এই যারা কাছে আসে এই তারা কাছাকাছি নাই।

           সৃষ্টিস্রোত-কোলাহলে বিলাপ শুনিবে কে বা কার,

           আপন গর্জনে বিশ্ব আপনারে করেছে বধির।

                     শতকোটি হাহাকার

                     কলধ্বনি রচে তার--

           পিছু ফিরে চাহিবার কাল নাই, চলেছে অধীর।

হায় স্নেহ, হায় প্রেম, হায় তুই মানবহৃদয়,

           খসিয়া পড়িলি কোন্‌ নন্দনের তটতরু হতে?

                      যার লাগি সদা ভয়,

                      পরশ নাহিক সয়,

           কে তারে ভাসালে হেন জড়ময় সৃজনের স্রোতে?

           তুমি কি শুনিছ বসি হে বিধাতা, হে অনাদি কবি,

           ক্ষুদ্র এ মানবশিশু রচিতেছে প্রলাপজল্পনা?

                      সত্য আছে স্তব্ধ ছবি

                      যেমন উষার রবি,

           নিম্নে তারি ভাঙে গড়ে মিথ্যা যত কুহককল্পনা।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •