জননী, কন্যারে আজ বিদায়ের ক্ষণে আপন অতীতরূপ পড়িয়াছে মনে যখন বালিকা ছিলে। মাতৃক্রোড় হতে তোমারে ভাসালো ভাগ্য দূরতর স্রোতে সংসারের। তার পর গেল কত দিন দুঃখে সুখে, বিচ্ছেদের ক্ষত হল ক্ষীণ। এ-জন্মের আরম্ভভূমিকা-- সংকীর্ণ সে প্রথম উষার মতো-- ক্ষণিক প্রদোষে মিলাইল লয়ে তার স্বর্ণ কুহেলিকা। বাল্যে পরেছিলে শুভ্র মাঙ্গল্যের টিকা, সিন্দূররেখায় হল লীন। সে-রেখাটি জীবনের পূর্বভাগ দিল যেন কাটি। আজ সেই ছিন্নখণ্ড ফিরে এল শেষে তোমার কন্যার মাঝে অশ্রুর আবেশে।
সংসারে মোরে রাখিয়াছ যেই ঘরে সেই ঘরে রব সকল দুঃখ ভুলিয়া। করুণা করিয়া নিশিদিন নিজ করে রেখে দিয়ো তার একটি দুয়ার খুলিয়া। মোর সব কাজে মোর সব অবসরে সে দুয়ার রবে তোমারি প্রবেশ-তরে, সেথা হতে বায়ু বহিবে হৃদয়-'পরে চরণ হতে তব পদরজ তুলিয়া। সে দুয়ার খুলি আসিবে তুমি এ ঘরে, আমি বাহিরিব সে দুয়ারখানি খুলিয়া। আর যত সুখ পাই বা না পাই, তবু এক সুখ শুধু মোর তরে তুমি রাখিয়ো। সে সুখ কেবল তোমার আমার প্রভু, সে সুখের 'পরে তুমি জাগ্রত থাকিয়ো। তাহারে না ঢাকে আর যত সুখগুলি, সংসার যেন তাহাতে না দেয় ধূলি, সব কোলাহল হতে তারে তুমি তুলি যতন করিয়া আপন অঙ্কে ঢাকিয়ো। আর যত সুখে ভরুক ভিক্ষাঝুলি, সেই এক সুখ মোর তরে তুমি রাখিয়ো। যত বিশ্বাস ভেঙে ভেঙে যায়, স্বামী, এক বিশ্বাস রহে যেন চিতে লাগিয়া। যে অনলতাপ যখনি সহিব আমি দেয় যেন তাহে তব নাম বুকে দাগিয়া। দুখ পশে যবে মর্মের মাঝখানে তোমার লিখন-স্বাক্ষর যেন আনে, রুক্ষ বচন যতই আঘাত হানে সকল আঘাতে তব সুর উঠে জাগিয়া। শত বিশ্বাস ভেঙে যদি যায় প্রাণে এক বিশ্বাসে রহে যেন মন লাগিয়া।