আমি যে বেসেছি ভালো এই জগতেরে; পাকে পাকে ফেরে ফেরে আমার জীবন দিয়ে জড়ায়েছি এরে; প্রভাত-সন্ধ্যার আলো-অন্ধকার মোর চেতনায় গেছে ভেসে; অবশেষে এক হয়ে গেছে আজ আমার জীবন আর আমার ভুবন। ভালোবাসিয়াছি এই জগতের আলো জীবনেরে তাই বাসি ভালো। তবুও মরিতে হবে এও সত্য জানি। মোর বাণী একদিন এ-বাতাসে ফুটিবে না, মোর আঁখি এ-আলোকে লুটিবে না, মোর হিয়া ছুটিবে না অরুণের উদ্দীপ্ত আহ্বানে; মোর কানে কানে রজনী কবে না তার রহস্যবারতা, শেষ করে যেতে হবে শেষ দৃষ্টি, মোর শেষ কথা। এমন একান্ত করে চাওয়া এও সত্য যত এমন একান্ত ছেড়ে যাওয়া সেও সেই মতো। এ দুয়ের মাঝে তবু কোনোখানে আছে কোনো মিল; নহিলে নিখিল এতবড়ো নিদারুণ প্রবঞ্চনা হাসিমুখে এতকাল কিছুতে বহিতে পারিত না। সব তার আলো কীটে-কাটা পুষ্পসম এতদিনে হয়ে যেত কালো।
ফুলদানি হতে একে একে আয়ুক্ষীণ গোলাপের পাপড়ি পড়িল ঝরে ঝরে। ফুলের জগতে মৃত্যুর বিকৃতি নাহি দেখি। শেষ ব্যঙ্গ নাহি হানে জীবনের পানে অসুন্দর। যে মাটির কাছে ঋণী আপনার ঘৃণা দিয়ে অশুচি করে না তারে ফুল, রূপে গন্ধে ফিরে দেয় ম্লান অবশেষ। বিদায়ের সকরুণ স্পর্শ আছে তাহে; নাইকো ভর্ৎসনা। জন্মদিনে মৃত্যুদিনে দোঁহে যবে করে মুখোমুখি দেখি যেন সে মিলনে পূর্বাচলে অস্তাচলে অবসন্ন দিবসের দৃষ্টিবিনিময়-- সমুজ্জ্বল গৌরবের প্রণত সুন্দর অবসান।