মিথ্যা আমি কী সন্ধানে যাব কাহার দ্বার। পথ আমারে পথ দেখাবে, এই জেনেছি সার। শুধাতে যাই যারি কাছে, কথার কি তার অন্ত আছে। যতই শুনি চক্ষে ততই লাগায় অন্ধকার। পথের ধারে ছায়াতরু নাই তো তাদের কথা, শুধু তাদের ফুল-ফোটানো মধুর ব্যাকুলতা। দিনের আলো হলে সারা অন্ধকারে সন্ধ্যাতারা শুধু প্রদীপ তুলে ধরে কয় না কিছু আর।
মাকে আমার পড়ে না মনে। শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে একটা কী সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে, মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে। মা বুঝি গান গাইত, আমার দোলনা ঠেলে ঠেলে; মা গিয়েছে, যেতে যেতে গানটি গেছে ফেলে। মাকে আমার পড়ে না মনে। শুধু যখন আশ্বিনেতে ভোরে শিউলিবনে শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে ফুলের গন্ধ আসে, তখন কেন মায়ের কথা আমার মনে ভাসে? কবে বুঝি আনত মা সেই ফুলের সাজি বয়ে, পুজোর গন্ধ আসে যে তাই মায়ের গন্ধ হয়ে। মাকে আমার পড়ে না মনে। শুধু যখন বসি গিয়ে শোবার ঘরের কোণে; জানলা থেকে তাকাই দূরে নীল আকাশের দিকে মনে হয়, মা আমার পানে চাইছে অনিমিখে। কোলের 'পরে ধরে কবে দেখত আমায় চেয়ে, সেই চাউনি রেখে গেছে সারা আকাশ ছেয়ে।