এ আমার শরীরের শিরায় শিরায় যে প্রাণ-তরঙ্গমালা রাত্রিদিন ধায় সেই প্রাণ ছুটিয়াছে বিশ্বদিগ্বিজয়ে, সেই প্রাণ অপরূপ ছন্দে তালে লয়ে নাচিছে ভুবনে; সেই প্রাণ চুপে চুপে বসুধার মৃত্তিকার প্রতি রোমকূপে লক্ষ লক্ষ তৃণে তৃণে সঞ্চারে হরষে, বিকাশে পল্লবে পুষ্পে-- বরষে বরষে বিশ্বব্যাপী জন্মমৃত্যুসমুদ্রদোলায় দুলিতেছে অন্তহীন জোয়ার-ভাঁটায়। করিতেছি অনুভব, সে অনন্ত প্রাণ অঙ্গে অঙ্গে আমারে করেছে মহীয়ান। সেই যুগযুগান্তের বিরাট স্পন্দন আমার নাড়ীতে আজি করিছে নর্তন।
আজ এই দিনের শেষে সন্ধ্যা যে ওই মানিকখানি পরেছিল চিকন কালো কেশে গেঁথে নিলেম তারে এই তো আমার বিনিসুতার গোপন গলার হারে। চক্রবাকের নিদ্রানীরব বিজন পদ্মাতীরে এই সে সন্ধ্যা ছুঁইয়ে গেল আমার নতশিরে নির্মাল্য তোমার আকাশ হয়ে পার; ওই যে মরি মরি তরঙ্গহীন স্রোতের 'পরে ভাসিয়ে দিল তারার ছায়াতরী; ওই যে সে তার সোনার চেলি দিল মেলি রাতের আঙিনায় ঘুমে অলস কায়; ওই যে শেষে সপ্তঋষির ছায়াপথে কালো ঘোড়ার রথে উড়িয়ে দিয়ে আগুন-ধূলি নিল সে বিদায়; একটি কেবল করুণ পরশ রেখে গেল একটি কবির ভালে; তোমার ওই অনন্ত মাঝে এমন সন্ধ্যা হয় নি কোনোকালে, আর হবে না কভু। এমনি করেই প্রভু এক নিমেষের পত্রপুটে ভরি চিরকালের ধনটি তোমার ক্ষণকালে লও যে নূতন করি।