৯ আষাঢ়, ১৩১৩


 

সব-পেয়েছি'র দেশ (sob peyechhir desh)


  সব-পেয়েছি'র দেশে কারো

                নাই রে কোঠাবাড়ি--

  দুয়ার খোলা পড়ে আছে,

                কোথায় গেল দ্বারী।

  অশ্বশালায় অশ্ব কোথায়,

                হস্তীশালায় হাতি,

  স্ফটিকদীপে গন্ধতৈলে

                জ্বালায় না কেউ বাতি।

  রমণীরা মোতির সিঁথি

                পরে না কেউ কেশে,

  দেউলে নেই সোনার চূড়া

                সব-পেয়েছি'র দেশে।

 

  পথের ধারে ঘাস উঠেছে

                গাছের ছায়াতলে,

  স্বচ্ছতরল স্রোতের ধারা

                পাশ দিয়ে তার চলে।

  কুটিরেতে বেড়ার 'পরে

                দোলে ঝুমকা-লতা,

  সকাল হতে মৌমাছিদের

                ব্যস্ত ব্যাকুলতা।

  ভোরের বেলা পথিকেরা

                কী কাজে যায় হেসে,

  সাঁজে ফেরে বিনা-বেতন

                সব-পেয়েছি'র দেশে।

 

  আঙিনাতে দুপুরবেলা

                মৃদুকরুণ গেয়ে

  বকুলতলার ছায়ায় ব'সে

                চরকা কাটে মেয়ে।

  মাঠে মাঠে ঢেউ দিয়েছে

                নতুন কচি ধানে--

  কিসের গন্ধ, কাহার বাঁশি

                হঠাৎ আসে প্রাণে।

  নীল আকাশের হৃদয়খানি

                সবুজ বনে মেশে,

  যে চলে সেই গান গেয়ে যায়

                সব-পেয়েছি'র দেশে।

 

  সদাগরের নৌকা যত

                চলে নদীর 'পরে--

  হেথায় ঘাটে বাঁধে না কেউ

                কেনাবেচার তরে।

  সৈন্যদলে উড়িয়ে ধ্বজা

                কাঁপিয়ে চলে পথ--

  হেথায় কভু নহি থামে

                মহারাজের রথ।

  এক রজনীর তরে হেথা

                দূরের পান্থ এসে

  দেখতে না পায় কী আছে এই

                সব-পেয়েছি'র দেশে।

 

  নাইকো পথে ঠেলাঠেলি,

                নাইকো হাটে গোল--

  ওরে কবি, এইখানে তোর

                কুটিরখানি তোল্‌।

  ধুয়ে ফেল্‌ রে পথের ধুলো

                নামিয়ে দে রে বোঝা--

  বেঁধে নে তোর সেতারখানা,

                রেখে দে তোর খোঁজা।

  পা ছড়িয়ে বোস্‌ রে হেথায়

                সারা দিনের শেষে

  তারায়-ভরা আকাশ-তলে

                সব-পেয়েছি'র দেশে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •