পাঁচদিন ভাত নেই, দুধ একরত্তি-- জ্বর গেল, যায় না যে তবু তার পথ্যি। সেই চলে জলসাবু, সেই ডাক্তারবাবু, কাঁচা কুলে আমড়ায় তেমনি আপত্তি। ইস্কুলে যাওয়া নেই সেইটে যা মঙ্গল-- পথ খুঁজে ঘুরিনেকো গণিতের জঙ্গল। কিন্তু যে বুক ফাটে দূর থেকে দেখি মাঠে ফুটবল-ম্যাচে জমে ছেলেদের দঙ্গল। কিনুরাম পণ্ডিত, মনে পড়ে, টাক তার-- সমান ভীষণ জানি চুনিলাল ডাক্তার। খুলে ওষুধের ছিপি হেসে আসে টিপিটিপি-- দাঁতের পাটিতে দেখি, দুটো দাঁত ফাঁক তার। জ্বরে বাঁধে ডাক্তারে, পালাবার পথ নেই; প্রাণ করে হাঁসফাঁস যত থাকি যত্নেই। জ্বর গেলে মাস্টারে গিঁঠ দেয় ফাঁসটারে-- আমারে ফেলেছে সেরে এই দুটি রত্নেই।
অধিক কিছু নেই গো কিছু নেই, কিছু নেই-- যা আছে তা এই গো শুধু এই, শুধু এই। যা ছিল তা শেষ করেছি একটি বসন্তেই। আজ যা কিছু বাকি আছে সামান্য এই দান-- তাই নিয়ে কি রচি দিব একটি ছোটো গান? একটি ছোটো মালা তোমার হাতের হবে বালা। একটি ছোটো ফুল তোমার কানের হবে দুল। একটি তরুলতায় ব'সে একটি ছোটো খেলায় হারিয়ে দিয়ে যাবে মোরে একটি সন্ধেবেলায়। অধিক কিছু নেই গো কিছু নেই, কিছু নেই। যা আছে তা এই গো শুধু এই, শুধু এই। ঘাটে আমি একলা বসে রই, ওগো আয়! বর্ষানদী পার হবি কি ওই-- হায় গো হায়! অকূল-মাঝে ভাসবি কে গো ভেলার ভরসায়। আমার তরীখান সইবে না তুফান; তবু যদি লীলাভরে চরণ কর দান, শান্ত তীরে তীরে তোমায় বাইব ধীরে ধীরে। একটি কুমুদ তুলে তোমার পরিয়ে দেব চুলে। ভেসে ভেসে শুনবে বসে কত কোকিল ডাকে কূলে কূলে কুঞ্জবনে নীপের শাখে শাখে। ক্ষুদ্র আমার তরীখানি-- সত্য করি কই, হায় গো পথিক, হায়, তোমায় নিয়ে একলা নায়ে পার হব না ওই আকুল যমুনায়।