ও আমার অভিমানী মেয়ে ওরে কেউ কিছু বোলো না। ও আমার কাছে এসেছে, ও আমায় ভালো বেসেছে, ওরে কেউ কিছু বোলো না। এলোথেলো চুলগুলি ছড়িয়ে ওই দেখো সে দাঁড়িয়ে রয়েছে, নিমেষহারা আঁখির পাতা দুটি চোখের জলে ভরে এয়েছে। গ্রীবাখানি ঈষৎ বাঁকানো, দুটি হাতে মুঠি আছে চাপি, ছোটো ছোটো রাঙা রাঙা ঠোঁট ফুলে ফুলে উঠিতেছে কাঁপি। সাধিলে ও কথা কবে না, ডাকিলে ও আসিবে না কাছে, ও সবার 'পরে অভিমান করে আপ্না নিয়ে দাঁড়িয়ে শুধু আছে। কী হয়েছে কী হয়েছে বলে বাতাস এসে চুলিগুলি দোলায়; রাঙা ওই কপোলখানিতে রবির হাসি হেসে চুমো খায়। কচি হাতে ফুল দুখানি ছিল রাগ করে ঐ ফেলে দিয়েছে- পায়ের কাছে পড়ে পড়ে তারা মুখের পানে চেয়ে রয়েছে। আয় বাছা, তুই কোলে ব'সে বল্ কী কথা তোর বলিবার আছে, অভিমানে রাঙা মুখখানি আন দেখি তুই এ বুকের কাছে। ধীরে ধীরে আধো আধো বল্ কেঁদে কেঁদে ভাঙা ভাঙা কথা, আমায় যদি না বলিবি তুই কে শুনিবে শিশু-প্রাণের ব্যথা।
পুষ্প দিয়ে মার যারে চিনল না সে মরণকে। বাণ খেয়ে যে পড়ে, সে যে ধরে তোমার চরণকে। সবার নীচে ধুলার 'পরে ফেল যারে মৃত্যু-শরে সে যে তোমার কোলে পড়ে-- ভয় কী বা তার পড়নকে। আরামে যার আঘাত ঢাকা, কলঙ্ক যার সুগন্ধ, নয়ন মেলে দেখল না সে রুদ্র মুখের আনন্দ। মজল না সে চোখের জলে, পৌঁছল না চরণতলে, তিলে তিলে পলে পলে ম'ল যেজন পালঙ্কে।