নিষ্ফল হয়েছি আমি সংসারের কাজে, লোকমাঝে আঁখি তুলে পারি না চাহিতে। ভাসায়ে জীবনতরী সাগরের মাঝে তরঙ্গ লঙ্ঘন করি পারি না বাহিতে। পুরুষের মতো যত মানবের সাথে যোগ দিতে পারি নাকো লয়ে নিজ বল, সহস্র সংকল্প শুধু ভরা দুই হাতে বিফলে শুকায় যেন লক্ষ্ণণের ফল। আমি গাঁথি আপনার চারি দিক ঘিরে সূক্ষ্ণ রেশমের জাল কীটের মতন। মগ্ন থাকি আপনার মধুর তিমিরে, দেখি না এ জগতের প্রকাণ্ড জীবন। কেন আমি আপনার অন্তরালে থাকি! মুদ্রিত পাতার মাঝে কাঁদে অন্ধ আঁখি।
কূল থেকে মোর গানের তরী দিলেম খুলে-- সাগর-মাঝে ভাসিয়ে দিলেম পালটি তুলে। যেখানে ওই কোকিল ডাকে ছায়াতলে-- সেখানে নয়। যেখানে ওই গ্রামের বধূ আসে জলে-- সেখানে নয়। যেখানে নীল মরণলীলা উঠছে দুলে সেখানে মোর গানের তরী দিলেম খুলে। এবার, বীণা, তোমায় আমায় আমরা একা। অন্ধকারে নাই বা কারে গেল দেখা। কুঞ্জবনের শাখা হতে যে ফুল তোলে সে ফুল এ নয়। বাতায়নের লতা হতে যে ফুল দোলে সে ফুল এ নয়। দিশাহারা আকাশভরা সুরের ফুলে সেই দিকে মোর গানের তরী দিলেম খুলে।