সকালে জাগিয়া উঠি ফুলদানে দেখিনু গোলাপ; প্রশ্ন এল মনে-- যুগ-যুগান্তের আবর্তনে সৌন্দর্যের পরিণামে যে শক্তি তোমারে আনিয়াছে অপূর্ণের কুৎসিতের প্রতি পদে পীড়ন এড়ায়ে, সে কি অন্ধ, সে কি অন্যমনা, সেও কি বৈরাগ্যব্রতী সন্ন্যাসীর মতো সুন্দরে ও অসুন্দরে ভেদ নাহি করে-- শুধু জ্ঞানক্রিয়া, শুধু বলক্রিয়া তার, বোধের নাইকো কোনো কাজ? কারা তর্ক করে বলে, সৃষ্টির সভায় সুশ্রী কুশ্রী বসে আছে সমান আসনে-- প্রহরীর কোনো বাধা নাই। আমি কবি তর্ক নাহি জানি, এ বিশ্বেরে দেখি তার সমগ্র স্বরূপে-- লক্ষকোটি গ্রহতারা আকাশে আকাশে বহন করিয়া চলে প্রকাণ্ড সুষমা, ছন্দ নাহি ভাঙে তার সুর নাহি বাধে, বিকৃতি না ঘটায় স্খলন; ঐ তো আকাশে দেখি স্তরে স্তরে পাপড়ি মেলিয়া জ্যোতির্ময় বিরাট গোলাপ।
জানি দিন অবসান হবে, জানি তবু কিছু বাকি রবে। রজনীতে ঘুমহারা পাখি এক সুরে গাহিবে একাকী-- যে শুনিবে, যে রহিবে জাগি সে জানিবে, তারি নীড়হারা স্বপন খুঁজিছে সেই তারা যেথা প্রাণ হয়েছে বিবাগি। কিছু পরে করে যাবে চুপ ছায়াঘন স্বপনের রূপ। ঝরে যাবে আকাশকুসুম, তখন কূজনহীন ঘুম এক হবে রাত্রির সাথে। যে-গান স্বপনে নিল বাসা তার ক্ষীণ গুঞ্জন-ভাষা শেষ হবে সব-শেষ রাতে।