জানি আমি, ছোটো আমার ঠাঁই-- তাহার বেশি কিছুই চাহি নাই। দিয়ো আমায় সবার চেয়ে অল্প তোমার দান, নিজের হাতে দাও তুলে তো রইবে অফুরান। আমি তো নই কাঙাল পরদেশী, পথে পথে খোঁজ করে যে যা পায় তারো বেশি। সকলটুকুই চায় সে পেতে হাতে, পুরিয়ে নিতে পারে না সে আপন দানের সাথে। তুমি শুনে বললে আমায় হেসে, বললে ভালোবেসে, "আশ মিটিবে এইটুকুতেই তবে?" আমি বলি, "তার বেশি কী হবে। যে-দানে ভার থাকে বস্তু দিয়ে পথ সে কেবল আটক করে রাখে। যে-দান কেবল বাহুর পরশ তব তারে আমি বীণার মতো বক্ষে তুলে লব। সুরে সুরে উঠবে বেজে, যেটুকু সে তাহার চেয়ে অনেক বেশি সে যে। লোভীর মতো তোমার দ্বারে যাহার আসা-যাওয়া তাহার চাওয়া-পাওয়া তোমায় নিত্য খর্ব করে আনে আপন ক্ষুধার পানে। ভালোবাসার বর্বরতা, মলিন করে তোমারি সম্মান পৃথুল তার বিপুল পরিমাণ। তাই তো বলি, প্রিয়ে, হাসিমুখে বিদায় কোরো স্বল্প কিছু দিয়ে; সন্ধ্যা যেমন সন্ধ্যাতারাটিরে আনিয়া দেয় ধীরে সূর্য-ডোবার শেষ সোপানের ভিতে সলজ্জ তার গোপন থালিটিতে।"
আদি অন্ত হারিয়ে ফেলে সাদা কালো আসন মেলে পড়ে আছে আকাশটা খোশ-খেয়ালি, আমরা যে সব রাশি রাশি মেঘের পুঞ্জ ভেসে আসি, আমার তারি খেয়াল, তারি হেঁয়ালি। মোদের কিছু ঠিক-ঠিকানা নাই, আমরা আসি, আমরা চলে যাই। ওই-যে সকল জ্যোতির মালা গ্রহতারা রবির ডালা জুড়ে আছে নিত্যকালের পসরা, ওদের হিসেব পাকা খাতায় আলোর লেখা কালো পাতায়, মোদের তরে আছে মাত্র খসড়া-- রঙ-বেরঙের কলম দিয়ে এঁকে যেমন খুশি মোছে আবার লেখে। আমরা কভু বিনা কাজে ডাক দিয়ে যাই মাঝে মাঝে, অকারণে মুচকে হাসি হামেশা। তাই বলে সব মিথ্যে নাকি। বৃষ্টি সে তো নয়কো ফাঁকি, বজ্রটা তো নিতান্ত নয় তামাশা। শুধু আমরা থাকি নে কেউ ভাই, হাওয়ায় আসি হাওয়ায় ভেসে যাই।