দুজন সখীরে দূর হতে দেখেছিনু অজানার তীরে। জানি নে কাদের ঘর; দ্বার খোলা আকাশের পানে, দিনান্তে কহিতেছিল কী কথা কে জানে। এক নিমিষেতে অপরিচয়ের দেখা চলে যেতে যেতে উপরের দিকে চেয়ে। দুটি মেয়ে যেন দুটি আলোকণা আমার মনের পথে ছায়াতলে করিল রচনা ক্ষণতরে আকাশের বাণী, অর্থ তার নাহি জানি। যাহারা ওদের চেনে, নাম জানে, কাছে লয় টেনে, একসাথে দিন যাপে, প্রত্যহের বিচিত্র আলাপে ওদের বেঁধেছে তারা ছোটো করে পরিচয়ডোরে। সত্য নয় ঘরের ভিত্তিতে ঘেরা সেই পরিচয়। যাবে দিন, সে জানা কোথায় হবে লীন। বন্ধহীন অনন্তের বক্ষতলে উঠিয়াছে জেগে কী নিশ্বাসবেগে যুগলতরঙ্গসম। অসীম কালের মাঝে ওরা অনুপম, ওরা অনুদ্দেশ, কোথায় ওদের শেষ ঘরের মানুষ জানে সে কি? নিত্যের চিত্তের পটে ক্ষণিকের চিত্র গেনু দেখি-- আশ্চর্য সে লেখা, সে তুলির রেখা যুগযুগান্তর-মাঝে একবার দেখা দিল নিজে-- জানি নে তাহার পরে কী যে।
তোমায় সৃষ্টি করব আমি এই ছিল মোর পণ। দিনে দিনে করেছিলেম তারি আয়োজন। তাই সাজালেম আমার ধুলো, আমার ক্ষুধাতৃষ্ণাগুলো, আমার যত রঙিন আবেশ, আমার দুঃস্বপন। "তুমি আমায় সৃষ্টি করো' আজ তোমারে ডাকি-- "ভাঙো আমার আপন মনের মায়া-ছায়ার ফাঁকি। তোমার সত্য, তোমার শান্তি, তোমার শুভ্র অরূপ কান্তি, তোমার শক্তি, তোমার বহ্নি ভরুক এ জীবন।'