সভায় তোমার থাকি সবার শাসনে। আমার কণ্ঠে সেথায় সুর কেঁপে যায় ত্রাসনে। তাকায় সকল লোকে তখন দেখতে না পাই চোখে কোথায় অভয় হাসি হাসো আপন আসনে। কবে আমার এ লজ্জাভয় খসাবে, তোমার একলা ঘরের নিরালাতে বসাবে। যা শোনাবার আছে গাব ওই চরণের কাছে, দ্বারের আড়াল হতে শোনে বা কেউ না শোনে।
তোমার মোহন রূপে কে রয় ভুলে? জানি না কি মরণ নাচে নাচে গো ওই চরণ-মূলে? শরৎ-আলোর আঁচল টুটে কিসের ঝলক নেচে উঠে, ঝড় এনেছ এলোচুলে। মোহন রূপে কে রয় ভুলে? কাঁপন ধরে বাতাসেতে, পাকা ধানের তরাস লাগে শিউরে ওঠে ভরা খেতে। জানি গো আজ হাহারবে তোমার পূজা সারা হবে নিখিল-অশ্রুসাগর-কূলে। মোহন রূপে কে রয় ভুলে?
কালের প্রবল আবর্তে প্রতিহত ফেনপুঞ্জের মতো, আলোকে আঁধারে রঞ্জিত এই মায়া, অদেহ ধরিল কায়া। সত্তা আমার,জানি না, সে কোথা হতে হল উত্থিত নিত্যধাবিত স্রোতে। সহসা অভাবনীয় অদৃশ্য এক আরম্ভ-মাঝে কেন্দ্র রচিল স্বীয়। বিশ্বসত্তা মাঝখানে দিল উঁকি, এ কৌতুকের পশ্চাতে আছে জানি না কে কৌতুকী। ক্ষণিকারে নিয়ে অসীমের এই খেলা, নববিকাশের সাথে গেঁথে দেয় শেষ-বিনাশের হেলা, আলোকে কালের মৃদঙ্গ উঠে বেজে, গোপনে ক্ষণিকা দেখা দিতে আসে মুখ-ঢাকা বধূ সেজে, গলায় পরিয়া হার বুদ্বুদ্ মণিকার। সৃষ্টির মাঝে আসন করে সে লাভ, অনন্ত তারে অন্তসীমায় জানায় অবির্ভাব।