কোলাহল তো বারণ হল এবার কথা কানে কানে। এখন হবে প্রাণের আলাপ কেবলমাত্র গানে গানে। রাজার পথে লোক ছুটেছে, বেচাকেনার হাঁক উঠেছে, আমার ছুটি অবেলাতেই দিনদুপুরের মধ্যখানে, কাজের মাঝে ডাক পড়েছে কেন যে তা কেই বা জানে। মোর কাননে অকালে ফুল উঠুক তবে মুঞ্জরিয়া। মধ্যদিনে মৌমাছিরা বেড়াক মৃদু গুঞ্জরিয়া। মন্দ-ভালোর দ্বন্দ্বে খেটে গেছে তো দিন অনেক কেটে অলস-বেলার খেলার সাথি এবার আমার হৃদয় টানে। বিনা-কাজের ডাক পড়েছে কেন যে তা কেই বা জানে।
প্রথম দিনের সূর্য প্রশ্ন করেছিল সত্তার নূতন আবির্ভাবে-- কে তুমি, মেলে নি উত্তর। বৎসর বৎসর চলে গেল, দিবসের শেষ সূর্য শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল পশ্চিম-সাগরতীরে, নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়-- কে তুমি, পেল না উত্তর।
ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে। নাস্তিক সেও পায়ে বিধাতার বর, ধার্মিকতার করে না আড়ম্বর। শ্রদ্ধা করিয়া জ্বালে বুদ্ধির আলো, শাস্ত্রে মানে না, মানে মানুষের ভালো। বিধর্ম বলি মারে পরধর্মেরে, নিজ ধর্মের অপমান করি ফেরে, পিতার নামেতে হানে তাঁর সন্তানে, আচার লইয়া বিচার নাহিকো জানে, পূজাগৃহে তোলে রক্তমাখানো ধ্বজা, -- দেবতার নামে এ যে শয়তান ভজা। অনেক যুগের লজ্জা ও লাঞ্ছনা, বর্বরতার বিকারবিড়ম্বনা ধর্মের মাঝে আশ্রয় দিল যারা আবর্জনায় রচে তারা নিজ কারা। -- প্রলয়ের ওই শুনি শৃঙ্গধ্বনি, মহাকাল আসে লয়ে সম্মার্জনী। যে দেবে মুক্তি তারে খুঁটিরূপে গাড়া, যে মিলাবে তারে করিল ভেদের খাঁড়া, যে আনিবে প্রেম অমৃত-উৎস হতে তারি নামে ধরা ভাসায় বিষের স্রোতে, তরী ফুটা করি পার হতে গিয়ে ডোবে -- তবু এরা কারে অপবাদ দেয় ক্ষোভে। হে ধর্মরাজ, ধর্মবিকার নাশি ধর্মমূঢ়জনেরে বাঁচাও আসি। যে পূজার বেদি রক্তে গিয়েছে ভেসে ভাঙো ভাঙো, আজি ভাঙো তারে নিঃশেষে -- ধর্মকারার প্রাচীরে বজ্র হানো, এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলোক আনো।