পথ চেয়ে তো কাটল নিশি, লাগছে মনে ভয়-- সকালবেলা ঘুমিয়ে পড়ি যদি এমন হয়। যদি তখন হঠাৎ এসে দাঁড়ায় আমার দুয়ার-দেশে। বনচ্ছায়ায় ঘেরা এ ঘর আছে তো তার জানা-- ওগো, তোরা পথ ছেড়ে দিস, করিস নে কেউ মানা। যদি-বা তার পায়ের শব্দে ঘুম না ভাঙে মোর, শপথ আমার, তোরা কেহ ভাঙাস নে সে ঘোর। চাই নে জাগতে পাখির রবে নতুন আলোর মহোৎসবে, চাই নে জাগতে হাওয়ায় আকুল বকুল ফুলের বাসে-- তোরা আমায় ঘুমোতে দিস যদিই-বা সে আসে। ওগো, আমার ঘুম যে ভালো গভীর অচেতনে-- যদি আমায় জাগায় তারি আপন পরশনে। ঘুমের আবেশ যেমনি টুটি দেখব তারি নয়নদুটি মুখে আমার তারি হাসি পড়বে সকৌতুকে-- সে যেন মোর সুখের স্বপন দাঁড়াবে সম্মুখে। সে আসবে মোর চোখের 'পরে সকল আলোর আগে, তাহারি রূপ মোর প্রভাতের প্রথম হয়ে জাগে। প্রথম চমক লাগবে সুখে চেয়ে তারি করুণ মুখে, চিত্ত আমার উঠবে কেঁপে তার চেতনায় ভ'রে-- তোরা আমায় জাগাস নে কেউ, জাগাবে সেই মোরে।
তব দক্ষিণ হাতের পরশ কর নি সমর্পণ। লেখে আর মোছে তব আলো ছায়া ভাবনার প্রাঙ্গণে খনে খনে আলিপন। বৈশাখে কৃশ নদী পূর্ণ স্রোতের প্রসাদ না দিল যদি শুধু কুণ্ঠিত বিশীর্ণ ধারা তীরের প্রান্তে জাগালো পিয়াসি মন। যতটুকু পাই ভীরু বাসনার অঞ্জলিতে নাই বা উচ্ছলিল, সারা দিবসের দৈন্যের শেষে সঞ্চয় সে যে সারা জীবনের স্বপ্নের আয়োজন।