ফাল্গুনের সূর্য যবে
দিল কর প্রসারিয়া সঙ্গীহীন দক্ষিণ অর্ণবে,
     অতল বিরহ তার যুগযুগান্তের
         উচ্ছ্বসিয়া ছুটে গেল নিত্য-অশান্তের
                 সীমানার ধারে;
             ব্যথার ব্যথিত কারে
                   ফিরিল খুঁজিয়া,
                   বেড়ালো যুঝিয়া
              আপন তরঙ্গদল-সাথে।
                   অবশেষে রজনীপ্রভাতে,
     জানে না সে কখন দুলায়ে গেল চলি
বিপুল নিশ্বাসবেগে একটুকু মল্লিকার কলি।
               উদ্বারিল গন্ধ তার,
সচকিয়া লভিল সে গভীর রহস্য আপনার।
          এই বার্তা ঘোষিল অম্বরে--
সমুদ্রের উদ্বোধন পূর্ণ আজি পুষ্পের অন্তরে।

নিশীথে রয়েছি জেগে; দেখি অনিমেখে,
লক্ষ হৃদয়ের সাধ শূন্যে উড়ে যায়।
কত দিক হতে তারা ধায় কত দিকে।
কত-না অদৃশ্যকায়া ছায়া-আলিঙ্গন
বিশ্বময় কারে চাহে, করে হায় হায়।
কত স্মৃতি খুঁজিতেছে শ্মশানশয়ন--
অন্ধকারে হেরো শত তৃষিত নয়ন
ছায়াময় পাখি হয়ে কার পানে ধায়।
ক্ষীণশ্বাস মুমূর্ষুর অতৃপ্ত বাসনা
ধরণীর কূলে কূলে ঘুরিয়া বেড়ায়।
উদ্দেশে ঝরিছে কত অশ্রুবারিকণা,
চরণ খুঁজিয়া তারা মরিবারে চায়।
কে শুনিছে শত কোটি হৃদয়ের ডাক!
নিশীথিনী স্তব্ধ হয়ে রয়েছে অবাক।

এই লভিনু সঙ্গ তব,
            সুন্দর, হে সুন্দর।
পুণ্য হল অঙ্গ মম,
            ধন্য হল অন্তর,
            সুন্দর, হে সুন্দর।
আলোকে মোর চক্ষু দুটি
মুগ্ধ হয়ে উঠল ফুটি,
হৃদ্‌গগনে পবন হল
            সৌরভেতে মন্থর,
            সুন্দর, হে সুন্দর।
এই তোমারি পরশরাগে
            চিত্ত হল রঞ্জিত,
এই তোমারি মিলন-সুধা
            রইল প্রাণে সঞ্চিত।
তোমার মাঝে এমনি ক'রে
নবীন করি লও যে মোরে,
এই জনমে ঘটালে মোর
            জন্ম-জন্মান্তর,
            সুন্দর, হে সুন্দর।