হে দুয়ার, তুমি আছ মুক্ত অনুক্ষণ, রুদ্ধ শুধু অন্ধের নয়ন। অন্তরে কি আছে তাহা বোঝে না সে, তাই প্রবেশিতে সংশয় সদাই। হে দুয়ার, নিত্য জাগে রাত্রিদিনমান সুগম্ভীর তোমার আহ্বান। সূর্যের উদয়-মাঝে খোল আপনারে। তারকায় খোল অন্ধকারে। হে দুয়ার, বীজ হতে অঙ্কুরের দলে খোল পথ, ফুল হতে ফলে। যুগ হতে যুগান্তর কর অবারিত, মৃত্যু হতে পরম অমৃত। হে দুয়ার, জীবলোক তোরণে তোরণে করে যাত্রা মরণে মরণে। মুক্তিসাধনার পথে তোমার ইঙ্গিতে "মাভৈঃ' বাজে নৈরাশ্যনিশীথে।
আজ এই দিনের শেষে সন্ধ্যা যে ওই মানিকখানি পরেছিল চিকন কালো কেশে গেঁথে নিলেম তারে এই তো আমার বিনিসুতার গোপন গলার হারে। চক্রবাকের নিদ্রানীরব বিজন পদ্মাতীরে এই সে সন্ধ্যা ছুঁইয়ে গেল আমার নতশিরে নির্মাল্য তোমার আকাশ হয়ে পার; ওই যে মরি মরি তরঙ্গহীন স্রোতের 'পরে ভাসিয়ে দিল তারার ছায়াতরী; ওই যে সে তার সোনার চেলি দিল মেলি রাতের আঙিনায় ঘুমে অলস কায়; ওই যে শেষে সপ্তঋষির ছায়াপথে কালো ঘোড়ার রথে উড়িয়ে দিয়ে আগুন-ধূলি নিল সে বিদায়; একটি কেবল করুণ পরশ রেখে গেল একটি কবির ভালে; তোমার ওই অনন্ত মাঝে এমন সন্ধ্যা হয় নি কোনোকালে, আর হবে না কভু। এমনি করেই প্রভু এক নিমেষের পত্রপুটে ভরি চিরকালের ধনটি তোমার ক্ষণকালে লও যে নূতন করি।