তোমায় আমার প্রভু করে রাখি আমার আমি সেইটুকু থাক্ বাকি। তোমায় আমি হেরি সকল দিশি, সকল দিয়ে তোমার মাঝে মিশি, তোমারে প্রেম জোগাই দিবানিশি, ইচ্ছা আমার সেইটুকু থাক্ বাকি-- তোমায় আমার প্রভু করে রাখি। তোমায় আমি কোথাও নাহি ঢাকি কেবল আমার সেইটুকু থাক্ বাকি। তোমার লীলা হবে এ প্রাণ ভরে এ সংসারে রেখেছ তাই ধরে, রইব বাঁধা তোমার বাহুডোরে বাঁধন আমার সেইটুকু থাক্ বাকি-- তোমায় আমার প্রভু করে রাখি।
ঘন অন্ধকার রাত, বাদলের হাওয়া এলোমেলো ঝাপট দিচ্ছে চার দিকে। মেঘ ডাকছে গুরুগুরু, থরথর করছে দরজা, খড়খড় করে উঠছে জানালাগুলো। বাইরে চেয়ে দেখি সারবাঁধা সুপুরি-নারকেলের গাছ অস্থির হয়ে দিচ্ছে মাথা-ঝাঁকানি। দুলে উঠছে কাঁঠাল গাছের ঘন ডালে অন্ধকারের পিণ্ডগুলো দল-পাকানো প্রেতের মতো। রাস্তার থেকে পড়েছে আলোর রেখা পুকুরের কোণে সাপ-খেলানো আঁকাবাঁকা। মনে পড়ছে ওই পদটা-- "রজনী শাঙন ঘন, ঘন দেয়া-গরজন-- স্বপন দেখিনু হেনকালে।' সেদিন রাধিকার ছবির পিছনে কবির চোখের কাছে কোন্ একটি মেয়ে ছিল, ভালোবাসার-কুঁড়ি-ধরা তার মন। মুখচোরা সেই মেয়ে, চোখে কাজল পরা, ঘাটের থেকে নীলশাড়ি "নিঙাড়ি নিঙাড়ি' চলা। আজ এই ঝোড়ো রাতে তাকে মনে আনতে চাই-- তার সকালে, তার সাঁঝে, তার ভাষায়, তার ভাবনায়, তার চোখের চাহনিতে-- তিন-শো বছর আগেকার কবির জানা সেই বাঙালির মেয়েকে। দেখতে পাই নে স্পষ্ট করে। আজ পড়েছে যাদের পিছনের ছায়ায় তারা শাড়ির আঁচল যেমন করে বাঁধে কাঁধের 'পরে, খোঁপা যেমন করে ঘুরিয়ে পাকায় পিছনে নেমে-পড়া, মুখের দিকে যেমন করে চায় স্পষ্টচোখে, তেমন ছবিটি ছিল না সেই তিন-শো বছর আগেকার কবির সামনে। তবু-- "রজনী শাঙন ঘন... স্বপন দেখিনু হেনকালে।'শ্রাবণের রাত্রে এমনি করেই বয়েছে সেদিন বাদলের হাওয়া, মিল রয়ে গেছে সেকালের স্বপ্নে আর একালের স্বপ্নে।