এ প্রাণ, রাতের রেলগাড়ি, দিল পাড়ি-- কামরায় গাড়িভরা ঘুম, রজনী নিঝুম। অসীম আঁধারে কালি-লেপা কিছুনয় মনে হয় যারে নিদ্রার পারে রয়েছে সে পরিচয়হারা দেশে। ক্ষণ-আলো ইঙ্গিতে উঠে ঝলি, পার হয়ে যায় চলি অজানার পরে অজানায়, অদৃশ্য ঠিকানায়। অতিদূর-তীর্থের যাত্রী, ভাষাহীন রাত্রি, দূরের কোথা যে শেষ ভাবিয়া না পাই উদ্দেশ। চালায় যে নাম নাহি কয়; কেউ বলে, যন্ত্র সে, আর কিছু নয়। মনোহীন বলে তারে, তবু অন্ধের হাতে প্রাণমন সঁপি দিয়া বিছানা সে পাতে। বলে, সে অনিশ্চিত, তবু জানে অতি নিশ্চিত তার গতি। নামহীন যে অচেনা বার বার পার হয়ে যায় অগোচরে যারা সবে রয়েছে সেথায়, তারি যেন বহে নিশ্বাস, সন্দেহ-আড়ালেতে মুখ-ঢাকা জাগে বিশ্বাস। গাড়ি চলে, নিমেষ বিরাম নাই আকাশের তলে। ঘুমের ভিতরে থাকে অচেতনে কোন্ দূর প্রভাতের প্রত্যাশা নিদ্রিত মনে।
কাঁচড়াপাড়াতে এক ছিল রাজপুত্তর, রাজকন্যারে লিখে পায় না সে উত্তর। টিকিটের দাম দিয়ে রাজ্য বিকাবে কি এ, রেগেমেগে শেষকালে বলে ওঠে--দুত্তোর! ডাকবাবুটিকে দিল মুখে ডালকুত্তোর।
যখনি যেমনি হোক জিতেনের মর্জি কথায় কথায় তার লাগে আশ্চর্যি। অডিটর ছিল জিতু হিসাবেতে টঙ্ক, আপিসে মেলাতেছিল বজেটের অঙ্ক; শুনলে সে, গেছে দেশে রামদীন দর্জি, শুনতে না-শুনতেই বলে 'আশ্চর্যি'। যে দোকানি গাড়ি তাকে করেছিল বিক্রি কিছুতে দাম না পেয়ে করেছে সে ডিক্রি, বিস্তর ভেবে জিতু উঠল সে গর্জি-- 'ভারি আশ্চর্যি'। শুনলে, জামাইবাড়ি ছিল বুড়ি ঝিনাদায়, ছ বছর মেলেরিয়া ভুগে ভুগে চিনা দায়, সেদিন মরেছে শেষে পুরোনো সে ওর ঝি, জিতেন চশমা খুলে বলে 'আশ্চর্যি'।