আমারে বাঁধবি তোরা সেই বাঁধন কি তোদের আছে। আমি যে বন্দী হতে সন্ধি করি সবার কাছে॥ সন্ধ্যা আকাশ বিনা ডোরে বাঁধল মোরে গো, নিশিদিন বন্ধহারা নদীর ধারা আমায় যাচে। যে কুসুম আপনি ফোটে, আপনি ঝরে, রয় না ঘরে গো-- তারা যে সঙ্গী আমার, বন্ধু আমার, চায় না পাছে॥ আমারে ধরবি ব'লে মিথ্যে সাধা। আমি যে নিজের কাছে নিজের গানের সুরে বাঁধা। আপনি যাহার প্রাণ দুলিল, মন ভুলিল গো-- সে মানুষ আগুন-ভরা, পড়লে ধরা সে কি বাঁচে। সে যে ভাই, হাওয়ার সখা, ঢেউয়ের সাথি, দিবারাতি গো কেবলই এড়িয়ে চলার ছন্দে তাহার রক্ত নাচে॥
আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়, সখীর হৃদয় কুসুম-কোমল-- কার অনাদরে আজি ঝরে যায়। কেন কাছে আস, কেন মিছে হাস, কাছে যে আসিত সে তো আসিতে না চায়। সুখে আছে যারা, সুখে থাক্ তারা, সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা, দুখিনী নারীর নয়নের নীর সুখী জনে যেন দেখিতে না পায়। তারা দেখেও দেখে না, তারা বুঝেও বোঝে না, তারা ফিরেও না চায়।
কোন্ খেলা যে খেলব কখন্ ভাবি বসে সেই কথাটাই-- তোমার আপন খেলার সাথি করো, তা হলে আর ভাবনা তো নাই ॥ শিশির-ভেজা সকালবেলা আজ কি তোমার ছুটির খেলা-- বর্ষণহীন মেঘের মেলা তার সনে মোর মনকে ভাসাই ॥ তোমার নিঠুর খেলা খেলবে যে দিন বাজবে সে দিন ভীষণ ভেরী-- ঘনাবে মেঘ, আঁধার হবে, কাঁদবে হাওয়া আকাশ ঘেরি। সে দিন যেন তোমার ডাকে ঘরের বাঁধন আর না থাকে-- অকাতরে পরানটাকে প্রলয়দোলায় দোলাতে চাই ॥