ভাগ্য তাহার ভুল করেছে-- প্রাণের তানপুরার গানের সাথে মিল হল না, বেসুরো ঝংকার। এমন ত্রুটি ঘটল কিসে আপনিও তা বোঝে নি সে, অভাব কোথাও নেই-যে কিছুই এই কি অভাব তার। ঘরটাকে তার ছাড়িয়ে গেল ঘরেরই আসবাবে। মনটাকে তার ঠাঁই দিল না ধনের প্রাদুর্ভাবে। যা চাই তারো অনেক বেশি ভিড় করে রয় ঘেঁষাষেঁষি, সেই ব্যাঘাতের বিরুদ্ধে তাই বিদ্রোহ তার নাবে। সব চেয়ে যা সহজ সেটাই দুর্লভ তার কাছে। সেই সহজের মূর্তি যে তার বুকের মধ্যে আছে। সেই সহজের খেলাঘরে ওই যারা সব মেলা করে দূর হতে ওর বদ্ধ জীবন সঙ্গ তাদের যাচে। প্রাণের নিঝর স্বভাব-ধারায় বয় সকলের পানে, সেটাই কি কেউ ফিরিয়ে দিল উলটো দিকের টানে। আত্মদানের রুদ্ধ বাণী বক্ষকপাট বেড়ায় হানি, সঞ্চিত তার সুধা কি তাই ব্যথা জাগায় প্রাণে। আপনি যেন আর কেহ সে এই লাগে তার মনে, চেনা ঘরের অচল ভিতে কাটায় নির্বাসনে। বসন ভূষণ অঙ্গরাগে ছদ্মবেশের মতন লাগে, তার আপনার ভাষা যে হায় কয় না আপন জনে। আজকে তারে নিজের কাছে পর করেছে কা'রা, আপন-মাঝে বিদেশে বাস হায় এ কেমনধারা। পরের খুশি দিয়ে সে যে তৈরি হল ঘ'ষে মেজে, আপনাকে তাই খুঁজে বেড়ায় নিত্য আপন-হারা।
তিন বছরের বিরহিণী জানলাখানি ধরে কোন্ অলক্ষ্য তারার পানে তাকাও অমন করে। অতীত কালের বোঝার তলায় আমরা চাপা থাকি, ভাবী কালের প্রদোষ-আলোয় মগ্ন তোমার আঁখি। তাই তোমার ওই কাঁদন-হাসির সবটা বুঝি না যে, স্বপন দেখে অনাগত তোমার প্রাণের মাঝে। কোন্ সাগরের তীর দেখেছ জানে না তো কেউ, হাসির আভায় নাচে সে কোন্ সুদূর অশ্রু-ঢেউ। সেখানে কোন্ রাজপুত্তুর চিরদিনের দেশে তোমার লাগি সাজতে গেছে প্রতিদিনের বেশে। সেখানে সে বাজায় বাঁশি রূপকথারই ছায়ে, সেই রাগিণীর তালে তোমার নাচন লাগে গায়ে। আপনি তুমি জানো না তো আছ কাহার আশায়, অনামারে ডাক দিয়েছ চোখের নীরব ভাষায়। হয়তো সে কোন্ সকালবেলা শিশির-ঝলা পথে জাগরণের কেতন তুলে আসবে সোনার রথে, কিম্বা পূর্ণ চাঁদের লগ্নে, বৃহস্পতির দশায়-- দুঃখ আমার, আর সে যে হোক, নয় সে দাদামশায়।