© Kriya Unlimited, 2010 - 2023
সকালবেলায় শীত-শীত ছিল। দুপুরবেলায় বাতাসটি অল্প-একটু তাতিয়া উঠিয়া দক্ষিণ দিক হইতে বহিতে আরম্ভ করিয়াছে।যতীন যে বারান্দায় বসিয়া ছিল সেখান হইতে বাগানের এক কোণে এক দিকে একটি কাঁঠাল ও আর-এক দিকে একটি শিরীষগাছের মাঝখানের ফাঁক দিয়া বাহিরের মাঠ চোখে পড়ে। সেই শূন্য মাঠ ফাল্গুনের রৌদ্রে ধুধু করিতেছিল। তাহারই একপ্রান্ত দিয়া কাঁচা পথ চলিয়া গেছে -- সেই পথ বাহিয়া বোঝাই-খালাস গোরুর গাড়ি মন্দগমনে গ্রামের দিকে ফিরিয়া চলিয়াছে, গাড়োয়ান মাথায় গামছা ফেলিয়া অত্যন্ত বেকারভাবে গান গহিতেছে।এমন সময় পশ্চাতে একটি সহাস্য নারীকণ্ঠ বলিয়া উঠিল,'কী যতীন, পূর্বজন্মের কারো কথা ভাবিতেছ বুঝি।'যতীন কহিল, 'কেন পটল, আমি এমনিই কি হতভাগা যে, ভাবিতে হইলেই পূর্বজন্ম লইয়া টান পাড়িতে হয়।'আত্মীয়সমাজে 'পটল' নামে খ্যাত এই মেয়েটি বলিয়া উঠিল,'আর ...
এক সময় যজ্ঞেশ্বরের অবস্থা ভালোই ছিল। এখন প্রাচীন ভাঙা কোঠাবাড়িটাকে সাপব্যাঙ-বাদুড়ের হস্তে সমর্পণ করিয়া খোড়ো ঘরে ভগবদগীতা লইয়া কালযাপন করিতেছেন। এগারো বৎসর পূর্বে তাঁহার মেয়েটি যখন জন্মিয়াছিল তখন বংশের সৌভাগ্যশশী কৃষ্ণপক্ষের শেষকলায় আসিয়া ঠেকিয়াছে। সেইজন্য সাধ করিয়া মেয়ের নাম রাখিয়াছিলেন কমলা। ভাবিয়াছিলেন, যদি এই কৌশলে ফাঁকি দিয়া চঞ্চলা লক্ষ্মীকে কন্যারূপে ঘরে ধরিয়া রাখিতে পারেন। লক্ষ্মী সে ফন্দিতে ধরা দিলেন না, কিন্তু মেয়েটির মুখে নিজের শ্রী রাখিয়া গেলেন। বড়ো সুন্দরী মেয়ে।মেয়েটির বিবাহ সম্বন্ধে যজ্ঞেশ্বরের যে খুব উচ্চ আশা ছিল তাহা নহে। কাছাকাছি যে-কোনো একটি সৎপাত্রে বিবাহ দিতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তাঁহার জ্যাঠাইমা তাঁহার বড়ো আদরের কমলাকে বড়ো ঘর না হইলে দিবেন না, পণ করিয়া বসিয়া আছেন। তাঁহার ...
বিরহিণী তার ফুলবাগানের এক ধারে বেদী সাজিয়ে তার উপর মূর্তি গড়তে বসল। তার মনের মধ্যে যে মানুষটি ছিল বাইরে তারই প্রতিরূপ প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে, আর চেয়ে চেয়ে দেখে, আর ভাবে, আর চোখ দিয়ে জল পড়ে।কিন্তু, যে রূপটি একদিন তার চিত্তপটে স্পষ্ট ছিল তার উপরে ক্রমে যেন ছায়া পড়ে আসছে। রাতের বেলাকার পদ্মের মতো স্মৃতির পাপড়িগুলি অল্প অল্প করে যেন মুদে এল।মেয়েটি তার নিজের উপর রাগ করে, লজ্জা পায়। সাধনা তার কঠিন হল, ফল খায় আর জল খায়, আর তৃণশয্যায় পড়ে থাকে।মূর্তিটি মনের ভিতর থেকে গড়তে গড়তে সে আর প্রতিমূর্তি রইল না। মনে হল, এ যেন কোনো বিশেষ মানুষের ছবি নয়। যতই বেশি চেষ্টা করে ততই বেশি তফাত হয়ে যায়।মূর্তিকে তখন সে গয়না দিয়ে সাজাতে থাকে, একশো এক পদ্মের ডালি দিয়ে পুজো করে, সন্ধেবেলায় তার সামনে গন্ধতৈলের প্রদীপ জ্বালে-- ...
শ্রীকান্ত আচার্য্য
স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত
শ্রাবণী সেন
জয়তী চক্রবর্তী
অপূর্বকৃষ্ণ বি. এ. পাস করিয়া কলিকাতা হইতে দেশে ফিরিয়া আসিতেছেন।নদীটি ক্ষুদ্র। বর্ষা অন্তে প্রায় শুকাইয়া যায়। এখন শ্রাবণের শেষে জলে ভরিয়া উঠিয়া একেবারে গ্রামের বেড়া ও বাঁশঝাড়ের তলদেশ চুম্বন করিয়া চলিয়াছে।বহুদিন ঘন বর্ষার পরে আজ মেঘমুক্ত আকাশে রৌদ্র দেখা দিয়াছে।নৌকায় আসীন অপূর্বকৃষ্ণের মনের ভিতরকার একখানি ছবি যদি দেখিতে পাইতাম তবে দেখিতাম সেখানেও এই যুবকের মানস-নদী নববর্ষায় কূলে কূলে ভরিয়া আলোকে জ্বলজ্বল এবং বাতাসে ছলছল করিয়া উঠিতেছে।নৌকা যথাস্থানে ঘাটে আসিয়া লাগিল। নদীতীর হইতে অপূর্বদের বাড়ির পাকা ছাদ গাছের অন্তরাল দিয়া দেখা যাইতেছে। অপূর্বের আগমন-সংবাদ বাড়ির কেহ জানিত না সেইজন্য ঘাটে লোক আসে নাই। মাঝি ব্যাগ লইতে উদ্যত হইলে অপূর্ব তাহাকে নিবারণ করিয়া নিজেই ব্যাগ হাতে লইয়া আনন্দভরে তাড়াতাড়ি না...
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
অদিতি মহসিন
হে মোর সুন্দর, যেতে যেতে পথের প্রমোদে মেতে যখন তোমার গায় কারা সবে ধুলা দিয়ে যায়, আমার অন্তর করে হায় হয়। কেঁদে বলি, হে মোর সুন্দর, আজ তুমি হও দণ্ডধর, করহ বিচার। তার পরে দেখি, এ কী, খোলা তব বিচারঘরের দ্বার, নিত্য চলে তোমার বিচার। নীরবে প্রভাত-আলো পড়ে
যদি ভরিয়া লইবে কুম্ভ, এসো ওগো, এসো মোর হৃদয়নীরে। তলতল ছলছল কাঁদিবে গভীর জল ওই দুটি সুকোমল চরণ ঘিরে। আজি বর্ষা গাঢ়তম, নিবিড়কুন্তলসম মেঘ নামিয়াছে মম দুইটি তীরে। ওই যে শবদ চিনি নূপুর-রিনিকিঝিনি, কে গো তুমি একাকিনী আসিছ ধীরে।যদি ভরিয়া লইবে কুম্ভ, এসো ওগো, এসো মোর হৃদয়নীরে।যদি কলস ভাসায়ে জলে বসিয়া থাকিতে চাও আপনা ভুলে-- হেথা শ্যাম দূর্বাদল, নবনীল নভস্তল, বিকশিত বনস্থল বিকচ ফুলে। দুটি কালো আঁখি দিয়া মন যাবে বাহিরিয়া
ও জোনাকী, কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ। আঁধার সাঁঝে বনের মাঝে উল্লাসে প্রাণ ঢেলেছ॥তুমি নও তো সূর্য, নও তো চন্দ্র, তোমার তাই ব'লে কি কম আনন্দ। তুমি আপন জীবন পূর্ণ ক'রে আপন আলো জ্বেলেছ॥তোমার যা আছে তা তোমার আছে, তুমি নও গো ঋণী কারো কাছে, তোমার অন্তরে যে শক্তি আছে তারি আদেশ পেলেছ।তুমি আঁধার-বাঁধন ছাড়িয়ে ওঠ, তুমি ছোটো হয়ে নও গো ছোটো, জগতে যেথায় যত আলো সবায় আপন ক'রে ফেলেছ॥
চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা