© Kriya Unlimited, 2010 - 2024
দেবব্রত বিশ্বাস
প্রমিত সেন
অপূর্বকৃষ্ণ বি. এ. পাস করিয়া কলিকাতা হইতে দেশে ফিরিয়া আসিতেছেন।নদীটি ক্ষুদ্র। বর্ষা অন্তে প্রায় শুকাইয়া যায়। এখন শ্রাবণের শেষে জলে ভরিয়া উঠিয়া একেবারে গ্রামের বেড়া ও বাঁশঝাড়ের তলদেশ চুম্বন করিয়া চলিয়াছে।বহুদিন ঘন বর্ষার পরে আজ মেঘমুক্ত আকাশে রৌদ্র দেখা দিয়াছে।নৌকায় আসীন অপূর্বকৃষ্ণের মনের ভিতরকার একখানি ছবি যদি দেখিতে পাইতাম তবে দেখিতাম সেখানেও এই যুবকের মানস-নদী নববর্ষায় কূলে কূলে ভরিয়া আলোকে জ্বলজ্বল এবং বাতাসে ছলছল করিয়া উঠিতেছে।নৌকা যথাস্থানে ঘাটে আসিয়া লাগিল। নদীতীর হইতে অপূর্বদের বাড়ির পাকা ছাদ গাছের অন্তরাল দিয়া দেখা যাইতেছে। অপূর্বের আগমন-সংবাদ বাড়ির কেহ জানিত না সেইজন্য ঘাটে লোক আসে নাই। মাঝি ব্যাগ লইতে উদ্যত হইলে অপূর্ব তাহাকে নিবারণ করিয়া নিজেই ব্যাগ হাতে লইয়া আনন্দভরে তাড়াতাড়ি না...
সাগর সেন
পঙ্কজ মল্লিক
সেদিন যুদ্ধের খবর ভালো ছিল না। রাজা বিমর্ষ হয়ে বাগানে বেড়াতে গেলেন।দেখতে পেলেন, প্রাচীরের কাছে গাছতলায় বসে খেলা করছে একটি ছোটো ছেলে আর একটি ছোটো মেয়ে।রাজা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমরা কী খেলছ।'তারা বললে, 'আমাদের আজকের খেলা রামসীতার বনবাস।'রাজা সেখানে বসে গেলেন।ছেলেটি বললে, 'এই আমাদের দণ্ডকবন, এখানে কুটীর বাঁধছি।'সে একরাশ ভাঙা ডালপালা খড় ঘাস জুটিয়ে এনেছে, ভারি ব্যস্ত।আর, মেয়েটি শাক পাতা নিয়ে খেলার হাঁড়িতে বিনা আগুনে রাঁধছে; রাম খাবেন, তারই আয়োজনে সীতার এক দণ্ড সময় নেই।রাজা বললেন, 'আর তো সব দেখছি, কিন্তু রাক্ষস কোথায়।'ছেলেটিকে মানতে হল, তাদের দণ্ডকবনে কিছু কিছু ত্রুটি আছে।রাজা বললেন, 'আচ্ছা, আমি হব রাক্ষস।'ছেলেটি তাঁকে ভালো করে দেখলে। তার পরে বললে, 'তোমাকে কিন্তু হেরে যেতে হবে।'রাজা বললেন, 'আমি ...
ইন্দ্রাণী সেন
শ্রাবণী সেন
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাত্রি তখন প্রায় দুটা। কলিকাতার নিস্তব্ধ শব্দসমুদ্রে একটুখানি ঢেউ তুলিয়া একটা বড়ো জুড়িগাড়ি ভবানীপুরের দিক হইতে আসিয়া বির্জিতলাওয়ের মোড়ের কাছে থামিল। সেখানে একটা ঠিকাগাড়ি দেখিয়া, আরোহী বাবু তাহাকে ডাকিয়া আনাইলেন। তাহার পাশে একটি কোট-হ্যাট-পরা বাঙালি বিলাতফের্তা যুবা সম্মুখের আসনে দুই পা তুলিয়া দিয়া একটু মদমত্ত অবস্থায় ঘাড় নামাইয়া ঘুমাইতেছিল। এই যুবকটি নূতন বিলাত হইতে আসিয়াছে। ইহারই অভ্যর্থনা উপলক্ষে বন্ধুমহলে একটা খানা হইয়া গেছে। সেই খানা হইতে ফিরিবার পথে একজন বন্ধু তাহাকে কিছুদূর অগ্রসর করিবার জন্য নিজের গাড়িতে তুলিয়া লইয়াছেন। তিনি ইহাকে দু-তিনবার ঠেলা দিয়া জাগাইয়া কহিলেন, 'মজুমদার, গাড়ি পাওয়া গেছে, বাড়ি যাও।'মজুমদার সচকিত হইয়া একটা বিলাতি দিব্য গালিয়া ভাড়াটে গাড়িতে উঠিয়া পড়িল। তাহার গাড়োয়ানকে ...
ইমন চক্রবর্তী
দাদামশায়, নীলমণিবাবুকে তোমার এত কেন ভালো লাগে আমি তো বুঝতে পারি নে।এই প্রশ্নটা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত প্রশ্ন, এর ঠিক উত্তর ক'জন লোকে দিতে পারে।তোমার হেঁয়ালি রাখো। অমন এলোমেলো আলুথালু অগোছালো লোককে মেয়েরা দেখতে পারে না।ওটা তো হল সার্টিফিকেট, অর্থাৎ লোকটা খাঁটি পুরুষমানুষ।জান না তুমি, উনি কথায় কথায় কী রকম হুলুস্থূল বাধিয়ে তোলেন। হাতের কাছে যেটা আছে সেটা ওঁর হাতেই ঠেকে না। সেটা উনি খুঁজে বেড়ান পাড়ায় পাড়ায়।ভক্তি হচ্ছে তো লোকটার উপরে।কেন শুনি।হাতের কাছের জিনিসটাই যে সবচেয়ে দূরের সে ক'জন লোক জানে, অথচ নিশ্চিন্ত হয়ে থাকে।একটা দৃষ্টান্ত দেখাও দেখি।যেমন তুমি।আমাকে তুমি খুঁজে পাও নি বুঝি?খুঁজে পেলে যে রস মারা যেত, যত খুঁজছি তত অবাক হচ্ছি।আবার তোমার হেঁয়ালি।উপায় নেই। দিদি, আমার কাছে আজও তুমি সহজ নও, নিত্য...
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়
সুমন চট্টোপাধ্যায়
একটুখানি জায়গা ছিল রান্নাঘরের পাশে,সেইখানে মোর খেলা হ'ত শুক্নো-পারা ঘাসে।একটা ছিল ছাইয়ের গাদা মস্ত ঢিবির মতো,পোড়া কয়লা দিয়ে দিয়ে সাজিয়েছিলেম কত।কেউ জানে না সেইটে আমার পাহাড় মিছিমিছি,তারই তলায় পুঁতেছিলেম একটি তেঁতুল-বিচি।জন্মদিনের ঘটা ছিল, ছয় বছরের ছেলে--সেদিন দিল আমার গাছে