মরণের ছবি মনে আনি। ভেবে দেখি শেষ দিন ঠেকেছে শেষের শীর্ণক্ষণে। আছে ব'লে যত কিছু রয়েছে দেশে কালে-- যত বস্তু, যত জীব, যত ইচ্ছা, যত চেষ্টা, যত আশানৈরাশ্যের ঘাতপ্রতিঘাত দেশে দেশে ঘরে ঘরে চিত্তে চিত্তে, যত গ্রহনক্ষত্রের দূর হতে দূরতর ঘূর্ণ্যমান স্তরে স্তরে অগণিত অজ্ঞাত শক্তির আলোড়ন আবর্তন মহাকালসমুদ্রের কূলহীন বক্ষতলে, সমস্তই আমার এ চৈতন্যের শেষ সূক্ষ্ম আকম্পিত রেখার এ ধারে। এক পা তখনো আছে সেই প্রান্তসীমায়, অন্য পা আমার বাড়িয়েছি রেখার ও ধারে, সেখানে অপেক্ষা করে অলক্ষিত ভবিষ্যৎ লয়ে দিনরজনীর অন্তহীন অক্ষমালা আলো-অন্ধকারে-গাঁথা। অসীমের অসংখ্য যা-কিছু সত্তায় সত্তায় গাঁথা প্রসারিত অতীতে ও অনাগতে। নিবিড় সে সমস্তের মাঝে অকস্মাৎ আমি নেই। একি সত্য হতে পারে। উদ্ধত এ নাস্তিত্ব যে পাবে স্থান এমন কি অণুমাত্র ছিদ্র আছে কোনোখানে। সে ছিদ্র কি এতদিনে ডুবাতো না নিখিলতরণী মৃত্যু যদি শূন্য হত, যদি হত মহাসমগ্রের রূঢ় প্রতিবাদ।
সংগ্রামমদিরাপানে আপনা-বিস্মৃত দিকে দিকে হত্যা যারা প্রসারিত করে মরণলোকের তারা যন্ত্রমাত্র শুধু, তারা তো দয়ার পাত্র মনুষ্যত্বহারা! সজ্ঞানে নিষ্ঠুর যারা উন্মত্ত হিংসায় মানবের মর্মতন্তু ছিন্ন ছিন্ন করে তারাও মানুষ বলে গণ্য হয়ে আছে! কোনো নাম নাহি জানি বহন যা করে ঘৃণা ও আতঙ্কে মেশা প্রবল ধিক্কার-- হায় রে নির্লজ্জ ভাষা! হায় রে মানুষ! ইতিহাসবিধাতারে ডেকে ডেকে বলি-- প্রচ্ছন্ন পশুর শান্তি আর কত দূরে নির্বাপিত চিতাগ্নিতে স্তব্ধ ভগ্নস্তূপে!