আরো কিছুখন নাহয় বসিয়ো পাশে, আরো যদি কিছু কথা থাকে তাই বলো। শরৎ-আকাশ হেরো ম্লান হয়ে আসে, বাষ্প-আভাসে দিগন্ত ছলোছলো। জানি তুমি কিছু চেয়েছিলে দেখিবারে, তাই তো প্রভাতে এসেছিলে মোর দ্বারে, দিন না ফুরাতে দেখিতে পেলে কি তারে হে পথিক, বলো বলো-- সে মোর অগম অন্তর-পারাবারে রক্তকমল তরঙ্গে টলোমলো। দ্বিধাভরে আজও প্রবেশ কর নি ঘরে, বাহির-আঙনে করিলে সুরের খেলা, জানি না কী নিয়ে যাবে-যে দেশান্তরে, হে অতিথি, আজি শেষবিদায়ের বেলা। প্রথম প্রভাতে সব কাজ তব ফেলে যে গভীর বাণী শুনিবারে কাছে এলে, কোনোখানে কিছু ইশারা কি তার পেলে হে পথিক, বলো বলো-- সে বাণী আপন গোপন প্রদীপ জ্বেলে রক্ত-আগুনে প্রাণে মোর জ্বলোজ্বলো।
হেথা যে গান গাইতে আসা আমার হয় নি সে গান গাওয়া-- আজো কেবলি সুর সাধা, আমার কেবল গাইতে চাওয়া। আমার লাগে নাই সে সুর, আমার বাঁধে নাই সে কথা, শুধু প্রাণেরই মাঝখানে আছে গানের ব্যাকুলতা। আজো ফোটে নাই সে ফুল, শুধু বহেছে এক হাওয়া। আমি দেখি নাই তার মুখ, আমি শুনি নাই তার বাণী, কেবল শুনি ক্ষণে ক্ষণে তাহার পায়ের ধ্বনিখানি। আমার দ্বারের সমুখ দিয়ে সে জন করে আসা-যাওয়া। শুধু আসন পাতা হল আমার সারাটি দিন ধ'র-- ঘরে হয় নি প্রদীপ জ্বালা, তারে ডাকব কেমন ক'রে। আছি পাবার আশা নিয়ে, তারে হয় নি আমার পাওয়া।